এইকাল নিউজ: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, রবিবার, শহিদ গৌরী লঙ্কেশ সভাকক্ষ (গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ)-এ সকাল দশটা থেকে সারাদিন ব্যাপী পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও অসম ও ত্রিপুরা থেকে প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন। প্রতিবেশী বাংলাদেশের মুক্তমনা আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও সম্মেলনে যোগ দেবেন। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার।
সম্মেলনের আহ্বায়কমণ্ডলীর পক্ষে দীপককুমার দাঁ, সুকুমার মিত্র ও কালীপদ সরকার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতি উপলক্ষ্যে দু’টি সভায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছে। রাজ্যের ৫০টিরও বেশি বিজ্ঞান, যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন অংশ গ্রহণ করছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্ব-সহ সম্মেলনে যোগ দেবেন শতাধিক প্রতিনিধি। আহ্বায়কদের মতে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যে সমস্ত সমমনস্ক ধর্মমোহমুক্ত বিজ্ঞান, যুক্তিবাদী, মানবিক, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালাচ্ছেন এমন বন্ধু সংগঠন ও ব্যাক্তিবৃন্দের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলাই লক্ষ্য। এ ছাড়া যে সমস্ত পত্র-পত্রিকা ও এই সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হচ্ছে তার প্রসারের জন্য সচেষ্ট হওয়ার লক্ষ্যেও এই আয়োজন। লেখালেখি দিয়ে সহয়োগিতা করা, পাঠক হিসেবে গ্রাহক হওয়া বা বিক্রির মাধ্যমে সেই সমস্ত পত্রিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। লেখালেখি, পারস্পরিক মত বিনিময় ছাড়া ধর্মের নামে গণ উন্মত্ততা ও কুসংস্কারকে প্রতিহত করা কোনও মতেই সম্ভব না। তাঁরা আরও মনে করেন, ‘মৌলবাদ চায় সামাজিক অজ্ঞতা, অশিক্ষা, অপবিজ্ঞানের প্রসার। তাকে মোকাবিলা করতে হাতে বই তুলে নেওয়া ও দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। অসির চেয়ে মসি যে ঢের শক্তিশালী, তার প্রমাণ তো আমরা বারবার পেয়েছি। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের শহিদের ঘটনা তো সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। এই শহিদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু বৌদ্ধিক জড়তা না কাটাতে পারলে মৌলবাদকে প্রতিহত করা সম্ভব না।’
এরই পাশাপাশি আমাদের দেশের অন্যান্য প্রদেশে সমমনস্ক মানুষ ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে, বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালীদের মধ্যে যাঁরা সমমনস্ক তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ভিন্ন ভাষাভাষীদের সঙ্গে তাঁদের মত বিনিময়ের পথ সুগম হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সংগঠকরা মনে করেন, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে একটু প্রসারিত মনে আমাদের ভাবনার আদান-প্রদানের পথেরও প্রসার ঘটবে। মৌলবাদের আঘাত যখন জোরালোভাবে আসছে তখন মানবিক মানুষদের সংহতি (Solidarity)মনোভাব গড়ে তুলে সেই আঘাতকে প্রত্যাঘাত করার শক্তি সঞ্চয় করতে এই না-ধার্মিক সম্মেলন। সম্মেলনে বাঙালি জাতিসত্তার উপর আঘাত হিসেবে এনআরসি বিরোধিতা, হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির আধিপত্যবাদের বিরোধিতার উপর জোর দেওয়া হবে। ইতিহাসের বিকৃতি, পাঠ্যপুস্তকের পাঠক্রমে ধর্মীয় মৌলবাদের অনুপ্রবেশে উদ্যোক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে জনমত গড়া সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য। এইসব বিষয়ই স্থান পাবে না-ধার্মিক রাজ্য সম্মেলনে।
২০ অক্টোবর, ২০১৯, রবিবার সারাদিন ব্যাপী না-ধার্মিক রাজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় প্রস্তুতি সভায় প্রায় ২০ টি সংগঠন ও বেশ কিছু ব্যাক্তিত্ব যোগ দিয়ে খসড়া প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। ওই খসড়া প্রতিবেদনের উপর ৮ ডিসেম্বর সম্মেলনে প্রতিনিধিরা সারাদিন আলোচনা করে কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।