এইকাল প্রতিবেদনঃ
বিয়েই মানতে নারাজ। ‘এটা কোনও বিয়েই নয়।’ বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ মেনে বিয়েকে মানতে নারাজ নদিয়া জেলার চাকদহ পুরসভার তিনকর্মী। স্বামীর পদবি স্ত্রী ব্যবহার করেন না। এই কারণে স্ত্রীর স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করেছেন চাকদহ পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর পদবি আলাদা কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে হেনস্থা করা হয়েছে অধ্যাপক জয়দেব মন্ডল ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা কুণ্ডুকে। অভিযোগ, সোমবার তাঁদের অপমান করে চাকদহ পুরসভা থেকে বের করে দেয় তিনজন পুরকর্মী। এদের মধ্যে দু’জন তাঁদের পিছু নিয়ে অফিসের বাইরে এসে হুমকিও দেয়। ওই দুই পুর-কর্মী বলে, ‘মেরে হাড়গোড় ভেঙে দেব।খবর করে দেব।’ এই ঘটনা যখন ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ চাকদহ পুরসভায় ঘটছে তখন বাকি পুরকর্মীরা কেউ ওই তিন পুরকর্মীর অভব্য ও গুণ্ডামিসুলভ আচরণের প্রতিবাদটুকুও করেননি।
চাকদহ পুরসভার এই বেআইনি ও অমানবিক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক মানবতাবাদী মঞ্চ। মঞ্চের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ মঙ্গলবার ডাঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু, অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, তাপস সেন, দীপককুমার দাঁ, তহমীনা খাতুন, দেবপ্রসাদ রায়চৌধুরী, সৈফুদ্দিন মণ্ডল, বির্বতন ভট্টাচার্য, বাসু আচার্য, অরূপশংকর মৈত্র ও সুকুমার মিত্র ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার কল্যাণীর মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানান। এদিনই অধ্যাপক জয়দেব মন্ডলও ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে কল্যাণী মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। কল্যাণীর মহকুমা শাসক ধীমান বাড়ুই এই অভিযোগ পেয়ে তৎপর হন। মহকুমা শাসক জয়দেব মন্ডল ও চন্দনা কণ্ডুর আইনি দাবি মতো চন্দনা কুন্ডুকে স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র দেওয়ার জন্য চাকদহ পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিককে নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, জয়দেব মন্ডল ও চন্দনা কণ্ডুর নৈতিক লড়াইয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সরব হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক মানবতাবাদী মঞ্চের আবেদনে কল্যাণীর মহকুমা শাসক ধীমান বাড়ুইয়ের হস্তক্ষেপে এদিনই অবশেষে স্থায়ী বাসিন্দা সংক্রান্ত শংসাপত্র পেয়ে যান চন্দনা কুন্ডু। আইনি লড়াইয়ে জয় হয় জয়দেব মন্ডল ও চন্দনা কুন্ডুর। জয় হয় পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক মানবতাবাদী মঞ্চের। মঞ্চের পক্ষ থেকে দোষী পুরকর্মীদের শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। মঞ্চ মনে করে, আন্দোলনে এখানেই শেষ নয়। চাকদহ পুরসভার সংশ্লিষ্ট পুরকর্মীদের শাস্তির দাবিতে প্রশাসনের নানা স্তরে আবেদন জানানো হবে। জয়দেববাবুদের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক মানবতাবাদী মঞ্চের সর্বতো সহযোগিতা দেওয়া হবে এমনটাই জানিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিজ্ঞান লেখক ডাঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু। জয়দেব মণ্ডল ও চন্দনা কুণ্ডু জানিয়েছেন, ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ, পুরুষতান্ত্রিকতা ও ধর্মের গোঁড়ামি ও দেশাচারের দাস ওই পুরকর্মীরা। বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবর্ষে চাকদহ পুরসভার কয়েকজন কর্মীর এই ধরনের মানসিকতা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
পশ্চিমবঙ্গ না-ধার্মিক মানবতাবাদী মঞ্চের আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সুকুমার মিত্র এইকাল প্রতিবেদনকে জানান, ভারতীয় আইন বলছে পদবি পরিবর্তন করা বা না করা পুরোটাই বিবাহিত মহিলার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ মতে বিয়ে করলে সেই আইনের কোথাও এই ধরনের নিদান নেই। তাই ওই আইনের কপি সহ কল্যাণী মহকুমা শাসক ধীমান বাড়ুই-এর নিকট আমাদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। মহকুমা শাসক সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার জন্য তাঁকে মঞ্চের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সুকুমারবাবু। ভবিষ্যতে আর কোনও দম্পতি যেন কোথাও এই ধরনের সমস্যায় না পড়েন সেই জন্য প্রশাসন ও সমাজকর্মীদের এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।পাশাপাশি তিনি দোষী পুরকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এই আশা প্রকাশ করেছেন।