শোভনলাল রাহা, নৈহাটি,এইকাল নিউজ:
ওরাও আমাদের সমাজের অঙ্গ, ওরাও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম দিশারি। কিন্তু ওদের ভোটাধিকার নেই। আর ভোট দিতে পারে না বলেই হয়তো ওদের নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদেরই মাথা ব্যথাও নেই । তাই ওরা আজ খাদ্য সংকটে অসহায় । কেউ কেউ তো অনাহারে ধুকছে ।
লকডাউনের জেরে বাজার হাট সব শুনশান । রাস্তা জনমানবশূন্য। খুব দরকার ছাড়া সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরোচ্ছেন না। কিন্তু এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃতির পশুপাখিরা। বিশেষ করে রাস্তার সারমেয়রা ।কারণ, বাজার-হাট বন্ধ থাকায় তারা প্রতিদিনকার পর্যাপ্ত খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।এমনকী, পাড়ায় পাড়ায় সাধারণ মানুষ গৃহবন্দি থাকায় দুপুরে বা রাতে খাবারের পর বেশিরভাগ পরিবারই রাস্তায় বেরিয়ে সারমেয়কে যে খাবার দেওয়ার রীতি, তা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন করোনার ভয়ে। কারণ, লকডাউনের জেরে রাস্তায় না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার । ফলে দিন যত এগোচ্ছে, সারমেয়দের অবস্থা ততই করুণ হচ্ছে খাদ্যের অভাবে। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এগিয়ে এলেন নৈহাটির কয়েকজন পশুপ্রেমী মানুষ ।
নৈহাটির বাসিন্দা পার্থ, রনি, মেঘা, মৃগাঙ্ক, জয়দেব, তন্ময়, তাপস, উত্তম, পিন্টুরা সারমেয়দের এই দুরবস্থার কথা চিন্তা করে এগিয়ে এসেছেন । রোজ রাতে ১২ কেজি চাল, ৪ কেজি মুরগির মাংস সারমেয়দের রান্না করে তাঁরা খাওয়াচ্ছেন। নৈহাটি পারহাউস মোড় থেকে নৈহাটি রাজ্য সদর হাসপাতাল হয়ে রাজেন্দ্রপুর, কল্যাণী হাইওয়ে দিয়ে সাহেব কলোনি মোর হয়ে 6নং বাজার, আনন্দ বাজার, রেলমাঠ, আর বি সি কলেজ, এলাকায় ঘুরে সেখানকার সারমেয়দের রাতের খাবার দিচ্ছেন প্রত্যহ ।পাশাপাশি দুপুরে সারমেয়দের মেনু ভাত, ডাল আর সয়াবিন । সারমেয়দের পুষ্টির কথা চিন্তা করেই দুপুরের মেনুতে সয়াবিন রাখা হয়েছে ।
এই অভিনব উদ্যোগ এর যিনি অন্যতম কর্ণধার, সেই পার্থ ঘোষ জানালেন, নৈহাটির এই গোটা এলাকায় প্রায় ৩০০ রাস্তার সারমেয়কে তাঁরা প্রতিদিন দুবেলা খাবার দিচ্ছেন নিয়ম করে ।নৈহাটি স্টেশনের পূর্ব পারে রেলওয়ে বুকিং কাউন্টার থেকে শুরু হচ্ছে এই সারমেয় দের খাবার দেওয়ার কর্মশসূচি ।তারপর গোটা এলাকার বিভিন্ন জায়গায়, এমনকী হাইরোডেও তাঁরা ঘুরে ঘুরে কমপক্ষে ৩০০ সারমেয়দের জড় করে খাবার দিচ্ছেন । যতদিন লকডাউন চলবে তাদের এই অভুক্ত সারমেয়দের খাদ্যদান কর্মসূচী তারা চালিয়ে যেতে চান।