Breaking
16 Apr 2025, Wed

রাজ্যপালের ভাষা অপমানজনক! ১৩ পাতার চিঠিতে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী

রিমা দাস, এইকাল নিউজ:

পত্র যুদ্ধ অব্যাহত প্রশাসনিক প্রধান ও সাংবিধানিক প্রধানের মধ্যে। রাজ্যপালের দেওয়া জোড়া চিঠির কড়া জবাব দিলেন শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে ১৩ পাতার পালটা চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।আগের চিঠিতে রাজ্যপাল যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা দেশের সংবিধানে নজিরবিহীন। চিঠিতে সেকথা উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘রাগ নয়, দুঃখ হচ্ছে’, লিখলেন তিনি। ওই চিঠিতে রাজ্যপাল যে ভাষা তার পূর্ব দুটি চিঠিতে প্রয়োগ করেছেন তা কার্যত ‘অপমানজনক’ ও ‘অবমাননাকর’ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যপালের উদ্দেশ্য এক চিঠিতে কুড়িটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন। রাজ্যপালের জোড়া চিঠির পরিবর্তে এদিন কড়া জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘একজন সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যপালের তরফের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে যে ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে তা অপমানজনক ও নজিরবিহীন। স্বাধীন ভারতের কোনও রাজ্যপাল এইরকম আচরণ করেননি।’ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘আমার মন্ত্রিসভা বা আধিকারিকদের রাজ্যপাল অপমান করতে পারেন না।’
একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক ধারার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সাংবিধানিক প্রধানের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একজন সাংবিধানিক প্রধান এই ধরনের ভাষা ও শব্দ প্রয়োগ করতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় উল্লেখ করেন, ‘রাজ্যপালের এই বার্তা কোনওভাবেই কাম্য নয়। ১৯৫০ সালে যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল তারপর থেকে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। ভারতের কোনও রাজ্যপাল এই শব্দ প্রয়োগ করতে পারেন না তার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি।’
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, এমন চলতে থাকলে রাজ্য চালানোর দায় হয়ে পড়বে তাঁর ক্ষেত্রে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘রাজ্যপালের চিঠি পড়ে তার রাগের থেকে দুঃখ বেশি হচ্ছে।’ তিনি রাজ্যপালের উদ্দেশ্য বলেছেন, ‘যদি রাজ্যের কোনও সিদ্ধান্তে মানতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রেও রাজ্যের নেওয়া সিদ্ধান্তকে রাজ্যপাল সম্মান দিতে বাধ্য।’ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের কোন সিদ্ধান্তে যদি রাজ্যপাল সহমত না হন, তাহলে সে ক্ষেত্রে তিনি সরাসরি তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে পারেন। অন্যথায় রাজ্যপালের উদ্দেশ্য তার বার্তা, ‘আমার সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে আপনাকে আমার চেয়ারে এসে বসতে হবে।’
উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রাজ্যপাল একটি ১৪ পাতার ও একটি ৭ পাতার চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখানে রাজ্যপাল উল্লেখ করেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার কাজ হল সংবিধানসম্মত পথে চলা, আর আমার কাজ হল সংবিধানকে সুরক্ষিত রাখা। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের প্রতি আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে তার অবমাননা করেছেন আপনি। এ রাজ্যের মানুষ যাঁকে সম্মানের সঙ্গে দিদি বলে ডাকেন, তাঁর কাছ থেকে এই সংকটের সময় তাঁদের এটাই প্রাপ্য। চিকিৎসকদের আটটি সংগঠন পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, সে কথা শোনা হচ্ছে না। আপনি যেভাবে সব ঢাকা চাপা দিতে চাইছেন, তার পরিণতি খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।এমনকী আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোবাইল ফোন বন্ধ করা হয়েছে। অথচ করোনা সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে যত ছবি উঠে আসবে ততই ভাল। তাই রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে আপনার রাজনৈতিক অ্যান্টেনা নামিয়ে রাখুন, সংঘাতের পথ ছেড়ে কাজ করুন।’ মুখ্যমন্ত্রী ‘নাটক’ করছেন বলেও কটাক্ষ করেছিলেন রাজ্যপাল।

Developed by