এইকাল নিউজ: সিপিএম একসময় রবীন্দ্রনাথ কে বুর্জোয়া কবি বলেছিল।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র কে বলেছিল তোজরের কুকুর।জ্যোতিবাবু যখন মুখ্যমন্ত্রী তখন ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই আমাদের মহানায়ক উত্তম কুমারের অকাল প্রয়ানের পর তাঁর মরদেহ রবীন্দ্রসদনে রাখার পারমিশন দেয়নি বামফ্রন্ট সরকার। কারন উত্তম কুমার নাকি ওঁদের চোখে সেই লেভেলের নায়ক নন।
তারও পরে অনেক বুদ্ধিজীবী কমরেড কে বলতে শোনাগেছে কিশোর কুমার কোনো গায়কের পর্যায়েই নাকি পড়েননা।
মুশকিল হল প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ওঁরা ভুল ছিল না ঠিক ছিল তা মানুষ বিচার করবে।
তবে সব সিপিএম এইরকম নন। ব্যতিক্রমও আছে। যেমন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যেমন বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ড: নির্ঝরিণী চক্রবর্তী। যেমন নৈহাটির প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্র ভট্টাচার্য। যেমন হালিশহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
তখন ২০০৭ সাল। আমি সেই সময় চরম সিপিএম বিরোধী একটি সংবাদপত্রে কাজ করা সত্ত্বেও কবি সুকান্তের ভাইপো বুদ্ধবাবু আমাকে নিজে হাতে গণমাধ্যম কেন্দ্র থেকে সাংবাদিকতার শংসাপত্র তুলে দিয়েছিলেন।বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুর সংস্পর্শে এসেছি। আমার শিক্ষক প্রবাদপ্রতিম সাহিত্য সমালোচক সরোজ বন্দোপাধ্যায় যখন বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেলেন সেদিন খুব স্বল্প সময়ের জন্য বুদ্ধবাবুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম সরোজ বাবুর সৌজন্যে। কথা বলতে গিয়ে এটা ভেবে অবাক হয়েছিলাম আমার মত তরুণ অনামি একজন সাংবাদিকের সঙ্গেও তিনি ( তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী) কতটা ডাউন টু আর্থ।
বুদ্ধবাবু নিজেও আমার মতই বাংলা অনার্সের ছাত্র ছিলেন। সরোজ বন্দোপাধ্যায়-এর কালজয়ী গ্রন্থ ‘বাংলা উপন্যাসের কালান্তর’ নিয়ে কথা হয়েছিল। কথা হয়েছিল বাংলা আঞ্চলিক সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ, গুরুত্ব ও তা চালানোর ক্ষেত্রে সামগ্রিক সমস্যা নিয়ে।
অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে চা এর কাপ হাতে তুলতে না চেয়ে ইতস্তত করলেও তিনি যখন 22-23 বছরের এক অনামি আনকোরা সাংবাদিককে বললেন ‘চা টা তুলে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে।’
মানুষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কে আমি শ্রদ্ধা করি। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি বুদ্ধবাবু মন থেকে এই রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতির আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কেন কিছু ক্ষেত্রে অসফল হয়েছেন তার বহুবিধ কারন ছিল। কিন্তু ব্যক্তি বুদ্ধদেব বাবু অনেস্টলি চেষ্টা করেছিলেন। লক্ষণ শেঠ, সুশান্ত ঘোষদের কারনে কলঙ্ক লিপ্ত হতে হয়েছিল নিপাট ভদ্র ও ব্যক্তিগত ভাবে সৎ এই মানুষটিকে।
প্রচারবিমুখ এই মানুষটির অন্তর থেকে করা রবি তর্পণ তাই ব্যতিক্রমী প্রয়াস হিসাবেই আমাদের মণিকোঠায় থেকে যাবে…