Breaking
11 Apr 2025, Fri

বাংলা সংস্কৃতির দুই দিকপাল দেবেশ রায় ও আনিসুজ্জামানের জীবনাবসান

এইকাল নিউজ:

Advertisement

একই দিনে বাংলা সংস্কৃতির দুই দিকপাল ব্যক্তিত্বকে হারালাম আমরা। প্রয়াত হলেন দুই বাংলার সংস্কৃতির মৈত্রীর অন্যতম রূপকার বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পদ্মভূষণ আনিসুজ্জামান। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এদিন রাতে জীবনাবসান হয় বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবেশ রায়ের। ঘটনায় স্তম্ভিত দুই বাংলার মানুষ।

দীর্ঘদিন ধরেই ভার্টিগোর সমস্যায় ভুগছিলেন ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’র রচয়িতা দেবেশ রায়। এরই মধ্যে ডিহাইড্রেশনজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
বুধবার তাঁকে ভর্তি করা হয় বাগুইআটির একটি নার্সিংহোমে। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনে। এদিন রাতে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনা আবহে মৃত্যু হওয়ায় তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালেই রিপোর্ট চলে আসার কথা। তারপরই নেওয়া হবে শেষকৃত্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল চুরাশি বছর।

অন্যদিকে, এদিন বিকেলে তিরাশি বছর বয়সে মৃত্যু হল বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল হৃদরোগও। তাঁর শরীরে করোনা সংক্রমণ মিলেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান জানিয়েছেন, ‘ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে বাবার মৃত্যু হয়েছে।” অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে ইউনিভার্সাল কার্ডিয়াক হাসপাতাল থেকে গত শনিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর ইউনিভার্সাল কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। এর আগেও গত মাসের প্রথম সপ্তাহেও তিনি একবার আরেকটি হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন।

ব্যতিক্রমী ঘরানার ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়ের জন্ম ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৩৬। বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গে। সেখানেই গড়ে ওঠে বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত। তাঁর লেখায় বারবার পটভূমি থেকে চরিত্র হয়ে ফিরে এসেছে উত্তরবঙ্গ। রাজনৈতিক কারণে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি কোণ ছিল তাঁর নখদর্পণে। পরবর্তীকালে কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’। তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘উদ্বাস্তু’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘সময় অসময়ের বৃত্তান্ত’, ‘শরীরে সর্বস্বতা’, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’, ‘তিস্তাপুরাণ’ এবং ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ । উত্তরবঙ্গ এবং তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ মিলেমিশে গিয়েছে এই উপন্যাসে। ১৯৯০ সালে এই উপন্যাসের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোকের ছায়া লেখক ও পাঠকমহলে।

আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে। প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কলকাতায় কাটলেও দেশভাগের পর ভর্তি হন খুলনা জেলা স্কুলে।

বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই সাহিত্যিক ১৯৭১ সালে সেদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। আমৃত্যু তিনি বাংলা আকাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গেও তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বর্তমান সম্পাদক রতনকমার নন্দী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শেষ করেছিলেন আনিসুজ্জামান। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে। গবেষক ও সাহিত্যিক হিসাবে বাংলাদেশের একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন। ‘বিপুলা পৃথিবী’ বইটির জন্য তিনি ২০১৭ সালে আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু দুই বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে অপূরণীয় ক্ষতি।

Developed by