Breaking
11 Apr 2025, Fri

আমফানে লণ্ডভণ্ড তিলোত্তমা, রাজ্যে ঝড়ের বলি ৭২!

এইকাল নিউজ: বিধ্বংসী আমফান একেবারে তছনছ করে দিয়ে গেল তিলোত্তমাকে। সেই জব চার্নকের হাত ধরে পত্তনের পর থেকে এই প্রথমবার এমন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করল শহর কলকাতা। কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে গোটা শহর। মাঝে কেটে গিয়েছে একটা গোটা দিন। অথচ শুক্রবার ভোরে খবর লেখার সময়ও জল ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন শহরের সিংহভাগ এলাকাই। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ শহরতলির অন্যান্য জেলা ও রাজ্যের অন্য এলাকাগুলিতে। সারা রাজ্যে আমফানের বলি হয়েছেন ৭২ জন।
মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বুধবার গোটা রাত নবান্নে কন্ট্রোলরুমে বসে কাটিছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর রেখেছেন শহরের আনাচে-কানাচে। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘করোনাবিধস্ত বঙ্গে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে একদিকে যেমন বহু জেলা গুড়িয়ে গিয়েছে, ঠিক তেমনই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের।’ এদিন মৃতদের পরিবার পিছু আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পরিবারের বটগাছের মতোই তাঁর আশ্বাস, ‘সামলে নেব, আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমফানের জেরে গোটা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গুঁড়িয়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং কলকাতা ৷ এরপরেই মৃত্যুর পরিসংখ্যানের হিসাব তুলে ধরেন তিনি। কলকাতায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ তার মধ্যে রিজেন্ট পার্ক এলাকায় সাইক্লোনের সময় গাছ উপড়ে মা -ছেলের মৃত্যু হয়েছে, অসাবধানতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন বেশ কয়েক জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃত ৭, উত্তর ২৪ পরগনায় আমফানে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, হাওড়ায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের, হুগলিতে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, পূর্ব মেদিনীপুরে ৬ জনের মৃত্যু হয়, পশ্চিম মেদিনীপুরে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের, এক জনের মৃত্যুর খবর এসেছে পূর্ব বর্ধমান থেকে, নদিয়ায় আমফানের বলি ৪ জন। সুন্দরবনে আরও ৪ জন ও ডায়মন্ড হারবার থেকে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। রানাঘাট ও বারুইপুর থেকে ৬ জন করের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা রাজ্যে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আধিকারিকদের তার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। মন্ত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখার কাজ ভাগ করে দেন তিনি। নিজেও শুক্রবার থেকে কিছু এলাকায় যাবেন বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একদিনের নোটিশে বিভিন্ন জেলা থেকে ৫ লক্ষ মানুষকে না সরালে আরও মানুষের প্রাণহানি ঘটত। দিঘায় কম ক্ষতি করলেও দুই ২৪ পরগনার সর্বনাশ করে শেষ করে দিয়েছে আমফান। যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে আমফান, তাতে গোটা ধ্বংসের চিত্রটা বুঝতেই ৩-৪ দিন লেগে যাবে, এক দিনে কিচ্ছু হবে না৷ পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় থেকে যা খবর পাচ্ছি, তা ভয়ঙ্কর ৷ অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, জল নেই ৷ রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত। প্রচুর বাড়ি, নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে ৷’
একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্জি, ‘ঝড় থেমে গেলেও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ ত্রাণ শিবির ছেড়ে যাবেন না। সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে রাজ্যের ১০-১২ দিনেরও বেশি সময় লাগবে৷’
তাণ্ডবের বর্ণনা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সাগরে আমফানের ল্যান্ডফল যখন হয় তখন এই গতিবেগ ছিল ১৮৫ কিমি। উপকূলবর্তী এলাকাতেই বেশি ক্ষতি হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টার মধ্যেই ২২২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত কয়েক দশকে এত কম সময়ে এত বৃষ্টি হয়নি। কলকাতায় ১১৫ কিমি/ঘন্টা গতিবেগ থাকলেও কলকাতার একেবারে উত্তরপ্রান্তের দমদমে হাওয়ার গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ১৩৩ কিমি/ ঘণ্টা । ঠিক সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ২০ মিনিটে সর্বোচ্চ গতিবেগে বয়ে গিয়েছিল আমফান।’
এদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও বিপর্যয়ে রাজ্যকে সাহায্যের জন্য দ্রুত বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ড পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে বাংলার এসে ক্ষয়ক্ষতি দেখে যাওয়ার অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েকেন মমতা। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে সবাইকে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Developed by