কুমার শানুর প্রথম প্লে ব্যাক কোন ছবিতে? এই প্রশ্ন করলে বেশিরভাগ মানুষ উত্তরে বলবেন, অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘যাদুগর’। আবার অনেকে বলেন বাংলাদেশের একটি বাংলা সিনেমা তিনকন্যা। কিন্তু এর কোনোটিই সঠিক উত্তর নয়। ‘যাদুগর’ প্রথম হিন্দি ছবিতে বড় ব্রেক। আর ‘তিন কন্যা’ প্ৰথম কোনও বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক। কিন্তু তাহলে প্রথম প্লেব্যাক কোন ছবিতে? নাসিরউদ্দিন-এর ‘হিরো হীরালাল’? উত্তর – না। আটের দশকের শুরুতে প্রথম বম্বে (এখন মুম্বই) পাড়ি দেন শানু। যদিও কয়েক বছরের মধ্যে ফের কলকাতা ফিরে আসেন তিনি।কয়েক বছর পর আবার দ্বিগুণ দৃঢ়তা ও সংকল্প নিয়ে বম্বে যান। আর মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সঙ্গীত জগতে প্রতিষ্ঠত হওয়ার লড়াই চালান। এবং অবশেষে মেলে আকাঙ্খিত সাফল্য। সানু ভট্টাচার্য থেকে কুমার শানু হয়ে ওঠার জার্নিতে বেশ কতগুলো হিন্দি ও বাংলা ছবি, এবং অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। এই স্ট্রাগল পিরিয়ডটা ছিল প্রায় ১০ বছরের। দমদম সিঁথির বাসিন্দা সঙ্গীতজ্ঞ পশুপতি ভট্টাচার্য-র কনিষ্ঠ পুত্র কেদারনাথ ভট্টাচার্যের কুমার শানু নামটি দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সুরকার জুটি কল্যানজি-অনন্দজি। তাঁরাই অমিতাভ বচ্চনের লিপে কুমার শানুকে প্রথম বড় ব্রেক দিয়েছিলেন যাদুগর ফিল্মে। তার আগে পর্যন্ত সানু ভট্টাচার্য-র সঙ্গীতের জার্নির অজানা ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে।
১৯৮৬ সালে বিকে ফেব্রিক্সের ব্যানারে বীরেন্দ্র শর্মা পরিচালিত একটা হিন্দি ছবি এসেছিল, যার নাম ছিল ‘না-সমঝ’। বাংলায় যার অর্থ করলে দাঁড়ায়— ‘অবুঝ’।
ছবিতে তারকা সমাবেশ বলতে আমরা যেটা বুঝি, এ ছবিতে বলার মতো তেমন কিছু ছিল না। ছবিতে পরিচিত মুখ বলতে রাজা মুরাদ ছিলেন, ছিলেন গোগা কাপুর, আর ছিলেন নানা পটেকর নামের এক অভিনেতা। নানা পটেকর বলে একজনকে আমরা জানি, যিনি ব্যতিক্রমধর্মী ছবি করে থাকেন। তার আরও একটা পরিচয়, তিনি একজন বলিষ্ঠ অভিনেতা। সিনেমার হিরো হতে গেলে চকলেট মার্কা হতেই হবে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বদ্ধমূল ধারণা তার সহজাত এবং বলিষ্ঠ অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে আরব সাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যিনি সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি নানা পটেকর। লেখার শুরুতে যে নানা পটেকরের কথা বলা হয়েছে, সেই তিনি আর এই নানা পটেকর এক ও অভিন্ন। কিন্তু ১৯৮৬ তে তিনি এই পর্যায়ের পরিচিতি পাননি। কাজেই সেই সময়ের নিরিখে তাকে মোটেও তারকা বলা যায় না। এই ছবিতে একটা গান ছিল—’তেরি মেরি ইয়ে কাহানি সব ইয়াদ করেঙ্গে…’।
জীতু-তপনের সুরে গানটিতে যিনি কণ্ঠ দিয়েছিলেন তার নাম সানু ভট্টাচার্য। গানটি যাঁরা শুনেছেন তাঁরা অনেকেই আমার সঙ্গে সহমত নাও হতে পারেন। বলতে পারেন, এটা সানু ভট্টাচার্য হতেই পারে না। এটা তো কুমার শানু! হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন, উনিই কুমার শানু। যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন, এই সানু ভট্টাচার্য আর কুমার শানু একই ব্যক্তি। যাঁরা জানেন না তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, কুমার শানু এই ‘সানু ভট্টাচার্য’ নামেই তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। অন্য আরও অনেকের মতো সানু ভট্টাচার্য নিজেও হয়তো জানতেন না, অদূর ভবিষ্যতে তিনি সানু ভট্টাচার্য থেকে কুমার শানু হয়ে উঠবেন এবং এই নামেই তিনি একদিন বিশ্বনন্দিত হবেন। এটা যে শুধু তাঁর ক্ষেত্রেই হয়েছে, তা কিন্তু না। বিশ্বের নাম করা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে এমন একাধিক নজির আছে।
বিখ্যাত গায়িকা পূর্ণিমা হিন্দি ছবিতে তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন একজন চাইল্ড সিঙ্গার হিসাবে। ছবির নাম আন্দাজ (১৯৭১)। তখন ওঁর নাম ছিল সুষমা শ্রেষ্ঠ। ১৯৯০-এর আগে পর্যন্ত এটাই ওঁর পরিচয় ছিল। ১৯৯০ তে ‘মা’ ছবি থেকে তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন পূর্ণিমা। পূর্ণিমা নামেই তিনি সবার কাছে অধিক পরিচিতা। তারপরে আমাদের সকলের প্রিয় রূপকথার নায়ক উত্তম কুমারের কথাই ধরা যাক। তিনি তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তাঁর পিতৃদত্ত নাম অরুণ চ্যাটার্জি হিসাবে। পরে একাধিকবার তিনি কখনও অরুণ কুমার, কখনও উত্তম চ্যাটার্জি নাম ব্যবহার করেছেন। কিন্তু কোনও নামেই তিনি খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি। এর অনেক পরে তিনি আবারও নিজের নাম পরিবর্তন করলেন— হলেন উত্তম কুমার। এই উত্তম কুমার নামটাই তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিল। কালে কালে তিনি আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠলেন ‘মহানায়ক’।
সানু ভট্টাচার্য থেকে কুমার শানু হয়ে ওঠার গল্পটা মোটামুটি সকলেরই জানা আছে। এই প্রতিবেদনের আলোচ্য বিষয় সেটা নয়। ‘কুমার শানু যখন সানু ভট্টাচার্য’ এই শিরোনাম থেকে মোটামুটি একটা আন্দাজ করে নেওয়া যায় এখানে আমরা কোন বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। আমরা এখানে সানু ভট্টাচার্যের কর্মকাণ্ডের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
১৯৮৬ সালের কথা শুরুতেই বলেছি। এবার বেশ কয়েকটা বছর পিছিয়ে যাওয়া যাক। সালটা ১৯৮৩। ‘বাপ-বেটে’ ছবিতে আমাদের সানু ভট্টাচার্য একটা গান করছিলেন। এক্ষেত্রে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন বাণী জয়রাম। মিউজিক করেছিলেন প্রবাদ প্রতিম ইলায়া রাজা। ইন্টারনেটের দৌলতে ইতিমধ্যে অনেকেরই এই গানটা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। না শোনা থাকলে একটু কষ্ট করে শুনে নেবেন। শুরুতেই বলেছি ‘না-সমঝ’ ছবিটার কথা। সেখানেও গায়কের পরিচয় তিনি সানু ভট্টাচার্য।
‘ইয়ে দেশ’ (১৯৮৪)। আনন্দ বক্সির কথায়, আর ডি বর্মনের সুর করা ‘দেখ না দেখ না…’ এই গানেও গায়ক হিসেবে তাঁর পরিচয় তিনি সানু ভট্টাচার্য। যদিও এই গানটিতে তাঁর উপস্থিতি খুবই সামান্য।
১৯৮৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে সুচন্দা চলচ্চিত্রের ব্যানারে শিবলি সাদেকের পরিচালনায় বাংলাদেশে ‘তিন কন্যা’ বলে একটা ছবির কাজ চলছে। ছবির গান রেকর্ডিং হবে কলকাতায়। ছবিটিতে গান গাইবেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা গায়ক এন্ড্রু কিশোর। ছবির সংগীত পরিচালক আলম খান। কিন্তু এন্ড্রু কিশোর মধ্যপ্রাচ্যে একটা শো করতে গিয়ে পাসপোর্ট জটিলতায় সেখানে প্রায় ২০/২৫ দিনের জন্য আটকে গিয়েছিলেন। পরে দেশে ফিরে বাসায় এসে একটি চিঠি পেয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা করে তড়িঘড়ি কলকাতায় চলে এসেছিলেন। ওঁর আসতে দেরি হওয়ায় সানু ভট্টাচার্য নামের এক স্থানীয় শিল্পী ‘তিন কন্যা’ ছবির গান ততক্ষণে গেয়ে ফেলেছেন। উনি যখন স্টুডিওতে গিয়ে হাজির হলেন, তখন তাঁকে দেখে ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্তা গোছের একজন ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘আমাদের শিল্পী এন্ড্রু চলে এসেছে, ওই ছেলেরে (সানু ভট্টাচার্য) বের করে দাও।’
এন্ড্রু কিশোর বাধা দিয়ে বললেন, ‘না, এটা হতে পারে না। উনি একজন শিল্পী। আমি তো এটা করতে পারি না।’
সানু ভট্টাচার্য পরে বাইরে এসে এন্ড্রু কিশোরকে বলেছিলেন, ‘তোমারই গান দাদা, প্রডিউসার চাইছেন, তুমি গান গাইবে না কেন? আমি তোমার গান গেয়ে ফেলেছি দাদা। আমার আর দরকার নেই। আমার জীবনে আমি কখনও রেডিওতে গান গাইনি। কোথাও গান গাইনি। তোমার দেরি হওয়ায় সিনেমায় প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম। ব্যস, মেরে দিলাম।’
সেদিন একজন সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পী আর একজন ভবিষ্যতের প্রবল সম্ভাবনাময় শিল্পীর কথপোকথনের মধ্যে দিয়ে যে পরিমাণ সৌজন্যবোধ প্রকাশ পেয়েছিল, তা আজও অটুট আছে। [তথ্য সূত্র: পঞ্চম দা আমাকে ‘ঢাকাইয়া’ ডাকতেন— এন্ড্রু কিশোর/ গান কথা গল্প/এন টিভি অনলাইন/২৭.৪.২০১৫]
‘তিন কন্যা’ মুক্তি পায় ১৯৮৫ তে।
মজার বিষয় হল এই ‘তিন কন্যা’ ছবিটির যে গানটি নিয়ে এতক্ষণ কথা হচ্ছিল সেই—’তিনকন্যা এক ছবি/ চন্দা, চম্পা আর ববি/ আয় না কাছে আয় না/ রাখব তোদের বায়না/ বল না কে কী নিবি…’ গানটার জন্য সানু ভট্টাচার্য সে দেশের জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু ভিনদেশি হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি ওঁর আর পাওয়া হয়নি। জাতীয় পুরস্কার একমাত্র সেদেশের বৈধ নাগরিকেরই পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। [তথ্য সূত্র: আলম খান/ বিবার্তা/১২.১১.২০১৮]
এই মুহূর্তে আরও একটি হিন্দি ছবির কথা মনে পড়ছে—’প্যায়ার কি পেহলি নজর’ (১৯৮৬)। সুলোচনা মনন্ধরের সংগীত পরিচালনায় ‘খুদা রাখে হাজারো সাল…’ গানটির কথা। গানটি ছিল একটি দ্বৈত সংগীত। গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন অনুরাধা পড়োয়াল। এই গানটিতে যিনি তাঁর সহ-গায়ক, তিনি সানু ভট্টাচার্য।
জীবনের প্রথম একক বাংলা অ্যালবাম—তরঙ্গ (১৯৮৬)। যার সুরকার ছিলেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক দিলীপ রায়। গানের কথা লিখেছিলেন আরেক প্রবাদ প্রতিম গীতিকার স্বর্গীয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গায়ক? উত্তরটা মোটামুটি সবাই জানে। সেই এক ও অদ্বিতীয় কুমার শানু। অথচ এই অ্যালবামটা যখন বাজারে আসে, তখনও তিনি কুমার শানু হয়ে ওঠেননি। ক্যাসেট কভারে এখনও গায়ক হিসেবে জ্বলজ্বল করছে সানু ভট্টাচার্যের নাম। তরঙ্গ ক্যাসেটের প্রতিটা গানই এক কথায় অনবদ্য হয়েছিল। যদিও সংকলনটি আশানুরূপ সাফল্যের মুখ দেখেনি।
১৯৮৭ সালে টি-সিরিজ থেকে ‘আমি নেই’ বলে একটা সংকলন বাজারে এসেছিল। এটি আদতে ছিল শ্রদ্ধেয় কিশোর কুমারের কালজয়ী কিছু বাংলা গানের কভার ভার্সন। গায়ক সানু ভট্টাচার্য। ক্যাসেট কভারে মাইক্রোফোন হাতে সানু ভট্টাচার্যের সেই ছবি এখনও ইন্টারনেটে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
১৯৮৭ সালে দূরদর্শনে সম্প্রচার হওয়া রামানন্দ সাগরের এপিক ধারাবাহিক রামায়ণের কথাই ধরা যাক। রবীন্দ্র জৈনের সুরে ‘রাম জি কি সেনা চলি..’ গানটিতেও আমরা সানু ভট্টাচার্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করি।
তারপর চলে আসি ১৯৮৮তে রেকর্ড হওয়া গুল আনন্দ প্রযোজিত, কেতন মেহতা পরিচালিত ‘হিরো হিরালাল’ ছবিটার গানের কথায়। খুব সম্ভবত সানু ভট্টাচার্যের একক কণ্ঠে রেকর্ড করা এটিই প্রথম গান। ভেনাস রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত হওয়া গানটি ছিল—’জসন্ হ্যায় মোহাব্বত কা…’। সুরকার ছিলেন ‘ক্যায়সে বানি’ বা ‘ডিস্কো ডান্ডিয়া’ অথবা ‘ডিউটি’ খ্যাত বাবলা। এই ছবির স্টার কাস্ট ছিল, নাসিরউদ্দিন শাহ, সঞ্জনা কাপুর, দীপা শাহি, জনি লিভার প্রমুখ।
প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বহু আগে কুমার শানু যখন কিশোর কণ্ঠী হিসাবে মাচা করে বেড়াচ্ছেন, কিংবা যখন মুম্বইয়ের বারে গাইছেন, সেই উপার্জন থেকে পয়সা জমিয়ে গ্যাঁটের কড়ি খড়চা করে গান রেকর্ড করে, সেই গান বগলদাবা করে যে সময়টাতে তিনি মিউজিক ডিরেক্টরদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেই সমস্ত স্ট্রাগলের দিনগুলোতে তাঁর পরিচয় ছিল তিনি সানু ভট্টাচার্য।
শ্রদ্ধেয় গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর একটা লেখায় লিখেছেন ‘অমর শিল্পী’র গান লেখার সময় তিনি এই সংকলনের সুরকার বাবুল বোসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন—’কে এই কুমার শানু?’ অথচ কুমার শানুর সঙ্গে তাঁর ইতিপূর্বেই যোগাযোগ হয়েছিল। যোগাযোগের সূত্র ছিল ‘তরঙ্গ’ নামের একটা বাংলা প্রাইভেট অ্যালবাম। যে অ্যালবামটির কথা আগেই বলেছি। তরঙ্গের গায়ক ছিলেন সানু ভট্টাচার্য। তারপরে মাঝে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। সানু ভট্টাচার্য কখন ‘কুমার শানু’ হয়ে উঠেছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি পুলক বাবুর জানা ছিল না। বাবুল বোস বলেছিলেন, ‘আপনার সেই ‘তরঙ্গ’ ক্যাসেটের সানু ভট্টাচার্যই তো এখন কুমার শানু!’ শুনে পুলকবাবু ভারি অবাক হয়েছিলেন।
‘অমর শিল্পী’ কুমার শানুকে বিরাট সাফল্য এনে দিয়েছিল, সে কথা বলাই বাহুল্য। সে এক ইতিহাস। সঙ্গত কারণেই সেই ইতিহাস এখানে আর টেনে আনতে চাইছি না। আমরা যে বিষয়টি নিয়ে এগোচ্ছিলাম যে, কুমার শানু হওয়ার আগে তিনি গায়ক হিসাবে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন। তখন ওঁর পরিচয় ছিল সানু ভট্টাচার্য। আমার যতদূর মনে আছে, ‘কিশোর কি ইয়াদেঁ’র একেবারে প্রথম সংকলনে গায়কের নামের জায়গায় সানু ভট্টাচার্যই লেখা ছিল। পুরনো সংগ্রহ যাঁদের কাছে আছে, (অবশ্য করেই আছে) তাঁরা বিষয়টা খুব ভালো করেই জানবেন। যদিও কুমার শানুর গুণগ্রাহীদের অতিরিক্ত ভালোবাসার অত্যাচারে ওঁর ‘সানু ভট্টাচার্য’ হিসাবে সীমিত কর্মকাণ্ড আজ কুমার শানুর নামে পাকাপাকি ভাবে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। তাতে কোনও সমস্যা নেই। অতীত যদি বর্তমানের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলতে চায়, বা তার সঙ্গে মিশে যেতে চায়, যাক না। ক্ষতি তো কিছু নেই। এক্ষেত্রে শুধু নামটাই পরিবর্তন হচ্ছে, মানুষটা নয়।