এইকাল নিউজ: করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরলেন নৈহাটি থানার পিসিওসি (সাব ইনসপেক্টর) সমীর দাস। করোনা কবলিত নৈহাটি এলাকায় দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন এই ‘ফ্রন্ট লাইনার’। তাঁর সুস্থতার খবরে এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকার ২৯টি করোনা আক্রান্ত পরিবারে, নৈহাটি থানার এই পিসিওসি সমীরবাবুই প্রত্যক্ষ ভাবে যোগাযোগ রেখেছেন এবং তাদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে তাঁদের পরিবারের সব সদস্যকে হোম কোয়ারান্টাইন থাকা অবস্থায় খাদ্য, ওষুধ ও সব রকম সাহায্য প্রদান– বিগত কয়েক মাস সবই হয়েছে সমীরবাবুর তদারকিতে। সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত হন।
গত ১৫ জুন তাঁর কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসে। যদিও কোনও উপসর্গ তাঁর ছিল না। রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর নৈহাটি থানা থেকেই অ্যাম্বুলেন্স করে তাঁকে রাজারহাট কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আট দিন হাসপাতালে থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। ২৪ জুন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছেড়ে দেয় ।
বর্তমানে তিনি ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী ৭দিন হোম কোয়ারান্টাইনে আছেন। জানা গেছে, সমীরবাবুর বাড়ির অন্য সদস্যদের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে ।
প্রসঙ্গত, নৈহাটি থানায় বহু দিন ধরেই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন এই সাব ইন্সপেক্টর। গত কয়েক মাস আগে গঙ্গার ঘাটে বাজি কারখানা থেকে নিয়ে আসা মসলা নিষ্ক্রিয়করণের সময় তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে বিস্ফোরণস্থলের পাশ থেকে এক শিশুর জীবন বাঁচান। বিষ্ফোরণের কম্পন ও শব্দে পাশে থাকা টালির বাড়িটি ভেঙে পড়েছিল। তার ভিতর থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করেন সমীরবাবু। তিনিও সাময়িক ভাবে আহত হন। কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয় তাঁর । এবার করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে গিয়ে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন তিনি।
সমীর বাবু বাড়ি ফেরার পর তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীদের খুব কাছ থেকে দেখলাম। আমার নিজেরও করোনা হয়েছিল। যদিও আমি ছিলাম উপসর্গবিহীন। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, করোনা নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না। আর করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে থাকুন।’ সমীরবাবুর আর্তি, ‘কোনও ব্যক্তির করোনা হলে তাঁর পরিবারকে একঘরে করে দেবেন না। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার সময় তাঁদের পাশে থাকুন। তাঁদের সবরকম সাহায্য করুন।’
সমীর বাবুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে। তিনি জানালেন, ‘রাজারহাট কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত মানের। সকালে টিফিন, তারপর লিকার চা। দুপুরে প্রোটিনযুক্ত খবার। কোনও দিন চিকেন, কোনও দিন মাছ, সাথে সবজি, ডাল, ভাত। সন্ধেবেলায় আবার টিফিন। রাতে আবার ভাত বা রুটিল সাথে ডিম বা মাছ। খাবার ব্যবস্থা খুবই উন্নত ছিল। মিনারেল ওয়াটারেল পরিষেবা ও তাছাড়া ঝা চকচকে হাসপাতাল। ডাক্তার এবং নার্সদের ব্যবহারে আপ্লুত। ডাক্তাররা দিনে দু’বার করে প্রত্যেক রুগীকে দেখাশোনা তো করেইছেন, সঙ্গে নার্সদের আন্তরিকতারও ঘাটতি নেই ।’