দেবী ঘোষাল:
প্রণব বাবুর সঙ্গে আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক ৫৪ বছরের। তিনি আমার থেকে বয়সে সামান্য ছোট ছিলেন। কিন্তু তবুও আমাদের সকলের কাছে তিনি অভিবাবকের মতো ছিলেন। পরামর্শ, উপদেশ, ভালো- মন্দ যে কোনও ব্যাপারেই তাঁকে বাদ দিয়ে আমরা কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না, আর ভাবতামও না। হি বিকেম এ পার্ট অ্যান্ড পারসন অফ আওয়ার লাইফ। প্রণব বাবু জীবনের শেষ কালে এসে, একটা কথা বারবার ব্যাক্তিগত স্তরে আমাকে বলতেন, ‘১ মে ১৯৬৬ বাংলা কংগ্রেস এর জন্ম লগ্ন থেকে আপনি আমার সঙ্গী। সেই শুরুর দিন থেকে আজ অবধি চলার পথে একএক করে সকলেই হারিয়ে গেছে। কেউ ছেড়ে চলে গেছেন পৃথিবী, কেউ মত পার্থক্যের জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু আপনি সেদিনও ছিলেন আজও আছেন। আপনি হচ্ছেন শেষ মানুষ যিনি আমার সঙ্গে শুরু করে আজও রয়ে গেছেন।’
এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার তাঁর দিল্লীর বাড়িতে গিয়েছি ও থেকেছি। কখনো তিনি তিনি অর্থমন্ত্রী, কখনো সাংসদ বা অন্য কোনও দফতর এর মন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি ভবনেও গিয়েছি বেশ কয়েকবার। অনেক অকৃতজ্ঞ লোককেও তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। উপকারও করেছি। যদিও তা তারা মনে রাখেনি। প্রণবদাও পরোপকারী ছিলেন।কেন্দ্রে প্রণবদা যখন প্রথমবার ডেপুটি মিনিস্টার হয়েছিলেন ইন্দ্রিরা গান্ধীর মন্ত্রীসভায়, সাতের দশকে তখনও আমি তাঁর সফর সঙ্গী ছিলাম। শেষ বার প্রনবদার দিল্লীর বাড়িতে গেয়েছিলাম ২০১৭ সালে। তারপর আমার শারীরিক অবনতির কারণে আর দিল্লী যাওয়া হয়নি। শেষ বার প্রনবদার সঙ্গে আমার দেখা হয় গতবছর বিজয়ার দিন। তিনি বীরভূমের বাড়ি থেকে দুর্গা পুজো সেরে দিল্লী যাওয়ার পথে কলকাতার বাড়িতে ছিলেন এক দিন। তখন তিনি ভারতরত্ন পেয়ে গেছেন। বিজয়ার দিন অনেক ক্ষন কথা হয়েছিল প্রণবদার সঙ্গে। কিন্তু সেদিন বুঝিনি এটাই শেষ দেখা। আমাদের সঙ্গে প্রণবদার পারিবারিক সম্পর্ক শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিল।