এইকাল নিউজ:
প্রতি বছর ৩রা সেপ্টেম্বর আসে। আসে ২৪শে জুলাই। আমরা মহানায়ককে “ঠাকুর”বানিয়ে আড়ম্বর করে আরাধনা করি। তাঁর নাম নিয়ে কতো পুরস্কার, কতো মিডিয়া পাবলিসিটি ! অথচ এতো বছরেও তাঁকে নিয়ে কোনো আর্কাইভ তৈরি হলোনা, তাঁর ছবিগুলোর সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা হলো না। ফিল্ম-স্টাডিজে তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলি নিয়ে কোনো পড়াশোনা হল না। আমাদের কোন দায় নেই, কোনও সরকারের কোন দায়িত্বও নেই। তারপরে আবার যেকোনো শিল্পীর যোগ্যতা বিচার হয় রাজনৈতিক রঙ দিয়ে!!
১৯৮০-র পর থেকে একটু একটু করে উত্তমকুমার “Larger than life” এক ব্যক্তিত্বে পর্যবসিত হয়েছেন। প্রতি বছরই ২৪শে জুলাই আর ৩রা সেপ্টেম্বর- এই দুটো দিন বাঙ্গালীর কাছে বাৎসরিক উৎসবের মতো। এখানে-সেখানে নানা অনুষ্ঠান, পত্র-পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে নানা রকম লেখা, এখনও অসংখ্য মানুষের তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় অগণিত পোস্ট। প্রায় বছরেই এখনও তাঁকে নিয়ে দু-একখানা বই প্রকাশিত হয়েই চলেছে। এক কথায় এই প্রচার-সর্বস্ব সময়ে দাঁড়িয়ে উত্তমকুমার একটা ফেনোমেনন।
কিন্তু ৪০ বছরেও তাঁকে নিয়ে একটার বেশি ইতিহাস- নির্ভর ডকুমেন্টারী কেন তৈরি হলো না। এন এফ ডি সি থেকে একটি ডকুমেন্টারি থাকলেও সেটি আশানুরূপ নয়। অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক… সব শৈল্পিক সত্ত্বাকে নিয়ে কোথাও পূর্ণাঙ্গ ভাবে তাঁকে বিশ্লেষণ করা হয়নি কেন? চূড়ান্ত অপমান, লাঞ্ছনা সয়ে একদিন তিনি পৌঁছেছিলেন আলোকজ্জ্বল শিখরে। সেই জেদ, অধ্যাবসায় আর হার-না-মানা মানসিকতাকে কে মনে রেখেছেন?
তিনি ছিলেন একজন দায়িত্ববান সামাজিক মানুষ, দুঃস্থ কলাকুশলীদের সত্যিকারের সহমর্মী। সে কথাই বা আজ ক’জন মনে রেখেছেন?দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্যার্থে উত্তমকুমার “শিল্পী সংসদ তৈরি করেছিলেন। সে ইতিহাসও অনেকের জানা। উত্তম-প্রয়ানের পর তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা মহানায়কের শিল্প-কীর্তিগুলি বাঁচিয়ে রাখার জন্য কোনও সৃষ্টিশীল পদক্ষেপ নিতে পারেনি। প্রতি বছর জুলাই মাসে ধরা-বাঁধা ক’খানা ছবি দেখিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়েছে। বরং আগে দূরদর্শনে অনেক পুরোনো ছবি দেখা যেত, যেগুলো কালের নিয়মে “হারিয়ে গেছে।“ হারিয়ে যায় কি করে? এতো বড় একটা সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই কেন? কেন আরো বেশী মানুষের কাছে সংস্থার কর্মসূচী পৌঁছে দেওয়া যায় নি? এতো বছরে রাজ্য সরকারও কখনও এদিকে আলোকপাত করে নি। এ দায় কার?