Breaking
11 Apr 2025, Fri

নয়ের দশকের মেলোডি কিং কুমার শানুর রাজকীয় উত্থান ‘আশিকী’ থেকে। কিন্তু তার আগেও অসংখ্য সিনেমায় প্লে ব্যাক করেছেন তিনি। গেয়েছেন শতাধিক গান। শোভনলাল রাহা সম্পাদিত এইকাল-এর পাতায় ভারতীয় সঙ্গীত জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানুর জন্মদিনে সেই তথ্যের ঝুলি খুললেন প্রতিবেদক তারকনাথ দত্ত

|| আশিকির আগে||সানু ভট্টাচার্য থেকে কুমার শানু হওয়ার পর আশিকী পূর্ববর্তী তিনি কী কী কাজ করেছিলেন তার একটি সম্ভাব্য তালিকা নিয়ে এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
তালিকা সম্পূর্ণ একথা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তারপরেও চেষ্টা থেকেছে যতটা সম্ভব তালিকাকে সমৃদ্ধ করার। এর বাইরেও হয়ত বেশ কিছু মণি মুক্তো দৃষ্টির অগোচরে থেকে গেছে। পাঠকের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ এর বাইরেও যদি কিছু আপনাদের স্মরণে থেকে থাকে তো অবশ্যই সেটা জানিয়ে আমাকে এবং এই লেখাটিতে সমৃদ্ধ করবেন।প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক রাজেশ রোশনের সাথে কুমার শানুর প্রথম আলাপের কথা আজ আমরা প্রত্যেকেই মোটামুটি ভাবে জেনে গেছি। দু’জনার প্রথম সাক্ষাতের যে মজাদার কাহিনী কুমার শানু নিজেই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে একাধিকবার বলেছেন। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে রাজেশ রোশন স্বয়ং সেই ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ নিজমুখে বর্ণনা করে কুমার শানুর বলা ঘটনার উপর সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। ইউটিউবে সেই ভিডিও একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই পাওয়া যাবে। সুতরাং সেই ঘটনা নতুন করে আর এখানে টেনে আনতে চাইছি না।
কুমার শানুর গলায় কিশোর কুমারের বিখ্যাত গান শুনে তাঁর মনে যে খটকা তৈরি হয়েছিল তা দূরীভূত হতেই তিনি কথা দিয়েছিলেন সময় সুযোগ মত তিনি কুমার শানুকে ডেকে নেবেন। বলাই বাহুল্য তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন। ১৯৮৭ তে ‘মারধর’ নামে একটা ছবি এসেছিল যার সুরকার ছিলেন রাজেশ রোশন। তিনি তাঁর পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই ছবিতে কুমার শানুকে গান গাইবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। গীতিকার আনজানের কথায় কুমার শানুর গাওয়া গানটি ছিল— ‘পাগল মন মেরা..’ এই গানটিতে কুমার শানুর সহ শিল্পীরা ছিলেন সাধনা সরগরম ও চান্দ্রু আত্মা। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আমরা ধরে নিতে পারি এটিই ছিল রাজেশ রোশনের সুরে কুমার শানুর গাওয়া প্রথম কোন হিন্দি ছবির গান।
মাঝে বেশ কিছুদিনের বিরতি। তারপরে ১৯৮৮ তে এলো ‘আভি তো ম্যায় জাবান হুঁ’ বলে একটা ছবি। এই ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া একটি গান অবশ্য আছে; কিন্তু তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হবার খুব একটা কারণ নেই। কেননা এই ছবিতে তিনি ‘ইনা মিনা ডিকা…’ যে গানটি গেয়েছিলেন সেটি আসলে কিশোর কুমারের গাওয়া একটা সুপার হিট গানের রিমেক ভার্সন। এই বছরই ‘ঘাবড়াহাট (১৯৮৮)’ একটি লো বাজেটের বি গ্রেড ছবিতে কুমার শানুকে আমরা একটি গান গাইতে দেখি। গানটি হলো—’চোরি চোরি খেল গোরি…’ যে গানে ওনার সহ শিল্পীরা ছিলেন হেমলতা ও সুশীল কুমার। গানটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন রবীন্দ্র জৈন।
শানু ভট্টাচার্যের কুমার শানুর হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে ক’জন মানুষের সক্রিয় প্রয়াস আমরা দেখতে পাই তাদের মধ্যে গজল সম্রাট জগজিৎ সিং অন্যতম। তিনি যে শুধু নিজের সুরারোপিত কোন ছবিতে কুমার শানু কে গানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাই না। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেইসময়রকার বিখ্যাত সুরকার জুটি কল্যানজি-আনন্দজির সাথে কুমার শানুর আলাপ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এখানেই থেমে না থেকে তিনি সুরকার দ্বয়কে রীতিমত অনুরোধ করেছিলেন তার শ্বশুর বাড়ির দেশ থেকে আসা অনামী অখ্যাত যুবককে তাদের মিউজিক টিমে জায়গা দেওয়ার জন্য। জগজিৎ সিং কোন সাধারণ মানুষ নন। গজল সম্রাট তিনি। তার সংগীত প্রজ্ঞা নিয়ে কারোর সন্দেহ থাকার কথা না। তিনি আর যাই হোক কোনরকমের সম্ভাবনা না থাকলে কোন আনকোরা কণ্ঠের হয়ে এই জাতীয় তদ্বির করতেন না। কল্যান জি-আনন্দ জি সেকথা বিলক্ষণ জানতেন। তাঁরা শানু ভট্টাচার্যকে তাদের মিউজিকক্যাল ট্রুপে জায়গা দিলেন। তাও আবার ওপেনিং পারফর্মার হিসেবে।সেই প্রবাদ প্রতিম গজল সম্রাট জগজিৎ সিংয়ের সুরে ‘কানুন কি আবাজ (১৯৮৮)’ নামের একটি ছবিতে কুমার শানু ও চিত্রা সিংয়ের (জগজিৎ সিং এবং চিত্রা সিং বাস্তবে এনারা দু’জন স্বামী-স্ত্রী) চমৎকার একটি ডুয়েট গান আছে—’সাজান মেরে সাজান…_’ এই গানটি শুনলে একটা কথা ধরে নেওয়া যায় যে, তখনও পর্যন্ত কুমার শানু তাঁর ভাব গুরু কিশোর কুমারের প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে গানটি তিনি গেয়েছেন ভারি চমৎকার। বিশেষ করে গানের একেবারে শেষ পর্যায়ে তাঁর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত স্বতঃস্ফূর্ত Yodeling আরেক দুরন্ত প্রতিভাবান জনপ্রিয় শিল্পীর মহান কলাকেই মনে করিয়ে দিয়েছে।এই বছরই আরেকটি ছবিতে কুমার শানুকে আমরা প্লেব্যাক করতে দেখি। ছবির নাম ‘কালা বাজার’। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন অনিল কাপুর, জ্যাকি শ্রফ, ফারহা, কিমি কাতকার, রাজা মুরাদ, জনি লিভার, সফি ইনামদার প্রমুখ। ‘কালা বাজার’ ছবিটির তারকা সমাবেশ দেখলে বুঝতে অসুবিধা হয় না ছবিটি আক্ষরিক অর্থেই একটি বিগ বাজেটের ছবি। এই ছবিটিতে কুমার শানুর সর্বমোট দু’টি গান। গান দু’টিকে যদি আমরা পর্যায়ক্রমে সাজাই তো তালিকাটা দাঁড়ায় অনেকটা এই রকম—
১. ‘এক তুঝমে হি রব দিখতা হ্যায়…’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কুমার শানু ও সারিকা কাপুর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পরবর্তী কালে এই সারিকা কাপুরের সাথে কুমার শানুর আরো বেশ কিছু চমৎকার ডুয়েট আছে।
২. কেহ দো ইয়ে হসিনো সে…’
কণ্ঠ শিল্পী: কুমার শানু, আশা ভোঁসলে ও আনোয়ার। ‘কালা বাজার’ ছবির সুরকার ছিলেন রাজেশ রোশন। গানের কথা লিখেছিলেন ইন্দিবর। ছবির গান আগেভাগে বাজারে এলেও ‘কালা বাজার’ রিলিজ করেছিল ১৯৮৯ সালে।
এই ছবিটির ঠিক অব্যবহিত পরেই যে ছবিটির উল্লেখ পাওয়া যায় সেটি হলো ‘আজনবি সায়া ১৯৮৯’। তথ্য বিভ্রান্তি দূর করতে জানিয়ে রাখি এই ‘অজনবি সায়া ১৯৯৮’ নামে আরো একটি হিন্দি ছবি আছে। এবং সেই ছবিতেও কুমার শানুর দু’টি গান আছে। দু’টি ছবির মধ্যে মিল বলতে এইটুকুই।
‘আজনবি সায়া’ নিতান্তই লো বাজেটের একটি বি গ্রেড মুভি। এই ছবির গানগুলোও যে খুব আহামরি কিছু হয়েছিল তাও না। ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া গানটি ছিল— ‘জঙ্গল মে মঙ্গল…’। গানের কথা লিখেছিলেন মিথিলেশ সিনহা নামের একজন জনৈক গীতিকার। সুর করেছিলেন গুলাম আলী।পরের ছবি ‘সিন্দুর কি আবাজ(১৯৮৮)’। এই ছবির সুরকার আবারো সেই রাজেশ রোশন। গীতিকার ইন্দিবর। কুমার শানু ও সাধনা সরগরমের যুগল বন্দিতে গানখানি ছিল—’ ঘর ঘর কি রামায়ণ…’
বলিউড ফিল্মি গানের ইতিহাসে অনু মালিক একটি অবিস্মরণীয় নাম। ৯০ তে যিনি প্রায় একার দক্ষতায় হিন্দি গানের প্রচলিত ধ্যান ধারণাকেই আমূল বদলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি অনু মালিক। অনু মালিক কুমার শানু জুটির বহু কালজয়ী গান ভারতীয় সংগীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৯৮৮ সালের যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময়টা অনু মালিকের স্ট্রাগল পিরিয়ড; কুমার শানুরও। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে অনু মালিক সক্রিয়ভাবে ছবির সংগীত পরিচালনায় পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন। সেই সময়টাতে এমন কিছু ছবির নাম করা যায় যা রীতিমত বাজার সফল ছবি। এর মধ্যে ‘মর্দ’ ছবিটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৮ তে ‘বর্দি’ নামের একটি ছবির গান বাজারে আসে। ব’র্দি’র অডিও গান প্রকাশ করেছিল টি-সিরিজ। কুমার শানু অনু মালিক জুটি প্রথম কোন্ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন এটা নিয়ে পরস্পর বিরোধী মতামত বাজারে চালু আছে। এই ‘বর্দি’ ছবিতে অনু মালিকের সুরে কুমার শানুর যে গানটির উল্লেখ আমরা পাই, সেটা হলো—’তেরি হিফাজত মেরি হিফাজত করতা হ্যায় বর্দি…’। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি যে, এই ‘বর্দি’ ছবির উপরোল্লেখিত গানটিই ছিল অনু মালিকের সুরে কুমার শানুর প্রথম রেকর্ড করা গান। এই ছবিটিও ১৯৮৯ সালে রিলিজ করে। এতো গেলো ১৯৮৮ সালে কুমার শানুর রেকর্ড করা গানের খতিয়ান। এবার আমরা পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের দিকে যদি দৃষ্টি ঘোরাই তাহলে দেখতে পাই বিগত বছরগুলোতে কুমার শানু যেভাবে তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিলেন, গুটি গুটি পায়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছিলেন, পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। এই বছরে প্রথমেই যে ছবিটির গানের কথা আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি এই গানগুলির সাথে শানুদা’র নিজের অনেক ঘটনা বহুল স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ছবির নাম আমরা প্রত্যেকেই জানি— ‘জাদুগর’। এমন অনেকেই আছেন যাদের ধারণা , এই ‘জাদুগর’ ছবিতেই কুমার শানু প্রথম প্লে-ব্যাক করেছিলেন। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই ছবির যিনি নায়ক তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। বলিউডের এই দীর্ঘদেহী শাহেনশাহ বা বেতাজ বাদশা অন্য অনেক সাধারণ পাবলিকের মত কুমার শানুর নিজেরও সবথেকে পছন্দের অভিনেতা। কুমার শানু তার কৈশোর যৌবনের সন্ধিক্ষণে এই অভিনেতার এতটাই গুণমুগ্ধ ছিলেন যে, নিজের চুলের কাটিংটাও অভিনেতার অনুকরণে রাখতে শুরু করেছিলেন। যদিও সেই অনুকরণের অভিজ্ঞতা ওনার জন্য খুব একটা সুখকর ছিল না। সে অন্য গল্প। সঙ্গত কারণেই সেই গল্প আর এখানে টেনে আনতে চাইছি না। যে কথা বলছিলাম, জাদুগর ছবিতে গান গাওয়াটা কুমার শানুর জন্য ছিল একটা বড়ধরনের সুযোগ। ইতিপূর্বে তিনি বেশ কিছু ছবিতে প্লেব্যাক করলেও সেসব গান নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। এটা নিয়ে হচ্ছিল। প্রথমত এই ছবির প্রযোজক তথা পরিচালক ছিলেন প্রকাশ মেহরা। জনপ্রিয় হিট ছবি করিয়ে হিসেবে প্রকাশ মেহরার বিশেষ খ্যাতি আছে। ইতিপূর্বে ‘শরাবী’ ইত্যাদি ছবি বানিয়ে তিনি রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত এই ছবির মূখ্য ভূমিকায় যিনি অভিনয় করেছেন তিনি বলিউডের বেতাজ বাদশা বলে পরিচিত। বহু বক্স অফিস কাঁপানো ছবি তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। শোলে, ডন, দিবার, সওদাগর, মিলি কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব। সেই প্রবাদ প্রতিম অমিতাভ বচ্চনের ছবিতে তাঁর নেপথ্যে কণ্ঠ দান করা যে কোন উদীয়মান শিল্পীর জন্য একটা বড়ধরনের সুযোগ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ছবির সুরকার কল্যাণ জি-আনন্দ জি। সুতরাং এ ছবি ঘিরে মানুষের বাড়তি আগ্রহ তৈরি হবে এ আর আশ্চর্য কী। হচ্ছিলও তাই। শোনা যায় ছবির নায়ক অমিতাভ বচ্চন তখন বিশেষ কারণে বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলেন।গান রেকর্ডিংয়ের পর সেই গানের অডিও ক্যাসেট নিয়ে নায়ক সঞ্জয় দত্ত অমিতাভ বচ্চনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য যেহেতু তাঁর নাম অমিতাভ বচ্চন। তিনি আর যাই হোক কোন এলিতেলি অভিনেতা নন। যে সময়টার কথা বলা হচ্ছে সেই সময়টাতে (এখনও) তার ব্র্যান্ড ভ্যালু আকাশ ছোঁয়া। তাঁর নেপথ্য কণ্ঠ কে হচ্ছে এটা তার জানার অধিকার আছে বৈকি। ইতিপূর্বে তাঁর নেপথ্য কণ্ঠ হয়ে যারা কাজ করছেন তাঁরা এক একজন দিকপাল গায়ক হিসেবে বিশেষ পরিচিত (পড়তে হবে, মুকেশ, মহঃ রফি, কিশোর কুমার, মহঃ আজিজের মত বাঘা বাঘা সব সিংগার)। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো কোন এক অজ্ঞাত কারণে কিশোর কুমার একদিন ঘোষণা করলেন যে তিনি অমিতাভ বচ্চনের হয়ে আর কোন ছবিতে কণ্ঠ দেবেন না। তাঁর এই ঘোষণা যে শুধু অমিতাভ বচ্চনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল তা না, বিশেষ কোনো কারণে তিনি সেইসময় বেশ কিছু নায়কের প্রতি খাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর এই বিধিনিষেধ সেই সমস্ত নায়কদের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য ছিল। কুমার শানুর গাওয়া গানগুলি ছবিতে থাকবে কি থাকবে না তা অনেকটাই অমিতাভ বচ্চনের পছন্দ অপছন্দের উপর নির্ভর করছিল। এক্ষেত্রে কুমার শানুর ভাগ্য প্রসন্ন ছিল বলতেই হবে। শেষমেষ তার গাওয়া গানগুলো অমিতজির পছন্দ হলো। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দিলেন এই নতুন শিল্পীর গানগুলোই তাঁর ছবিতে থাকবে। জাদুগর ছবিতে অমিতজির লিপে কুমার শানুর সর্বমোট তিনখানি গান। তিনটি গানই এককথায় অনবদ্য এবং বেশ শক্ত ধরনের গান। কুমার শানু গেয়েছেনও ভারি চমৎকার।
গীতিকার আনজান ও প্রকাশ মেহরার কথায় কুমার শানু এই ছবিতে গান করেছেন তিনটি। তার মধ্যে একটি আবার একক কণ্ঠে গাওয়া টাইটেল সং। হিন্দি ছবির গানে টাইটেল সংয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। দেখা গেছে কোন ছবির টাইটেল সং (যদি থাকে) সেই ছবির হিট গানগুলোর তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করে বসে আছে। জনপ্রিয়তার নিরিখে শ্রোতারা এই জাতীয় গানগুলোই বেশিবার বাজিয়েছেন।
আসুন একবার ‘জাদুগর’ ছবিতে কুমার শানুর গানগুলির উপর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। প্রথমে টাইটেল সং দিয়েই শুরু করা যাক।
১. ‘জাদুগর মেরা নাম হ্যায় গোগা…’
কণ্ঠ : কুমার শানু এবং জলি মুখার্জি।২.নাচ মেরি রাধা জরা জোরোসে নাচ…’ কণ্ঠ : কুমার শানু এবং অলকা ইয়াগনিক।প্রসিদ্ধ গায়িকা অলকা ইয়াগনিক যিনি কুমার শানুর দীর্ঘদিনের সিংগিং পার্টনারও বটে। এঁদের জুটিতে প্রচুর হিট গান শ্রোতাদের আগাগোড়া মুগ্ধ করে গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে। মজার বিষয় হলো বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তাঁকে (অলকা ইয়াগনিক) যখন প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যে, কুমার শানুর সাথে তার প্রথম ডুয়েট কোনটি? প্রতিবারই উনি মেরা দিল ভি কিতনা পাগল হ্যায়…’ সাজান (১৯৯১) ছবির এই বিখ্যাত গানটির কথা উল্লেখ করেন। উপরে ‘জাদুগর’ ছবির যে গানটির কথা উল্লেখ করলাম এটির রেকর্ডিংয়ের সময়কাল কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য আমাদের সামনে তুলে ধরে। কেননা বছরের হিসেব করলে এই গানটি ‘মেরা দিলভি’র’ অনেক আগের রেকর্ড করা। হতে পারে কোন কারণে তিনি (অলকা ইয়াগনিক) এই গানটি সম্পর্কে বিস্মৃত হয়েছেন। অথবা এমনও হতে পারে ‘মেরা দিলভি’র অভাবনীয় সাফল্য তাঁর স্মৃতিশক্তিকে কোনভাবে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু মনযোগী শ্রোতা যদি একটু মনযোগ সহকারে দু’টি গানের প্রতি কর্ণপাত করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন সময়ের সাথে কুমার শানুর কণ্ঠের ক্রমাগত পরিবর্তন দু’টি গানের মধ্যে স্পষ্ট ছাপ ফেলেছে। আবার এও হতে পারে অলকাজি যেটা বলে থাকেন সেটাই সঠিক। এ বিষয়ে সীমিত জ্ঞান থাকার কারণে গোটা বিষয়টাই এই প্রতিবেদকের বোঝার ভুল।৩.’আয়ে হ্যায় দুয়ায়ে লেনে…’ কণ্ঠ : কুমার শানু, সপনা মুখার্জি ও জলি মুখার্জি।দুঃখের বিষয় ছবিটা যতটা চলার কথা ছিল, ততটা চলেনি। যে কারণে গানগুলিও খুব বেশি প্রচার পায়নি।
ওই বছরই ‘জাদুগর’ ছবির ঠিক পরে পরেই আরো একটি ছবির উল্লেখ আমরা পাই। ছবিটি হলো ‘জ্যায়সি করনি ব্যায়সি ভরনি (১৯৮৯)’। বিমল কুমার পরিচালিত, গোবিন্দা, কিমি কাতকার, কাদের খান অভিনীত এ ছবির মিউজিক করেছিলেন রাজেশ রোশন। ইন্দিবরের কথায় গানটি ছিল—’আজা খেলে গেম কোই…’ এই গানটিতে কুমার শানুর সহশিল্পী ছিলেন সাধনা সরগম।১৯৮৯ এর আরো একটি ছবির কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ে যাচ্ছে। ছবিটির নাম ছিল ‘বিল্লো বাদশাহ’। গোবিন্দা, নীলম, শত্রুঘ্ন সিনহা অভিনিত ছবিটির পরিচালক ছিলেন শিশির মিশ্র। সংগীত পরিচালনা করেছিলেন গজল সম্রাট জগজিৎ সিং। কুমার শানুর সংগীত জীবনকে ত্বরান্বিত করার কাজে জগজিৎ সিংয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে কথা আগেই বলেছি। নিদা ফাজলি’র কথায় এই ছবিতে কুমার শানু গান গেয়েছিলেন দু’টি। একটি ছিল—’প্যায়ার করেঙ্গে আভি করেঙ্গ…’ (সহ শিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তি)।
অন্য গানটি হলো—’লড়কা রাজি লড়কি রাজি/ তো ক্যায়া করেগা কাজি…’ (সহ শিল্পী বিনোদ কে আর সহগল)।
১৯৮৯ এর আরো একটি ছবি আঁধিয়াঁ। অনেকে যেমন মনে করেন ‘জাদুগর’ ছবিতে কুমার শানু প্রথম প্লে-ব্যাক করেছিলেন। আবার এমন মানুষও আছেন যাদের ধারণা ‘জাদুগর’ নয় আদতে এই ‘আঁধিয়া’ ছবিটিতে বাপী লাহিড়ী সুরারোপিত কুমার শানুর গাওয়া ‘ফির দিলনে বো চোট খায়ি…’ গানটাই কুমার শানু বলিউড ছবিতে গাওয়া প্রথম কোন নেপথ্য গান। দুটোই মূলত ভিত্তিহীন তথ্য। কার্যক্ষেত্রে এর কোন সারবত্তা নেই। জগজিৎ সিং সুরারোপিত ‘আঁধিয়া’ নামের একটা ছবিতে কুমার শানু একটা গান অবশ্য গেয়েছিলেন। গায়ক নিজেই একাধিক সাক্ষাৎকারে সে কথা স্পষ্ট করেছেন। সেই ‘আঁধিয়া’ আর আর এই ‘আঁধিয়া’ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি প্রজেক্ট। জগজিৎ সিংয়ের সুর করা কুমার শানুর সেই গানটি ছিল ‘হাম করকে সাগাই…’ অজ্ঞাত কোন কারণে সে গান শ্রোতাদের কাছে এখনও পর্যন্ত অধরাই থেকে গেছে। কুমার শানুর অনেক দুষ্প্রাপ্য গান এতদিনে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তারপরেও কিছু গান আছে যার সন্ধান করে ওঠা এখনও পর্যন্ত সম্ভবপর হয়নি। তার মধ্যে এই গানটি তালিকার শীর্ষে থাকবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।কুমার শানু প্রথম কোন ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তার একটা সুস্পষ্ট ধারণা আমার আগের প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ আছে।
কুমার শানুর গাওয়া আশিকী পূর্ববর্তী
গানগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বসলে যে বিষয়টি আমাদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে সেটা হলো এই পর্যায়ে কুমার শানু সবথেকে বেশি যার সুরে কাজ করেছেন তিনি রাজেশ রোশন। কুমার শানু রাজেশ রোশন সখ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এই সময়টাতে এরা যেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছিলেন। সঙ্গত কারণেই দু’জনার মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠছিল।
আশিকী ছবির বিরাট সাফল্য বা আশিকী পরবর্তী নতুন নতুন সুরকারদের সাথে জুটি বেঁধে কুমার শানুর ক্রমবর্ধমান সাফল্যও সেই সুসম্পর্কের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। আশিকী পরবর্তী এই জুটির বিখ্যাত কাজগুলো সে কথাই প্রমাণ করে। বহু ভালো গান এনারা আমাদের উপহার দিয়েছেন। আমার বিদ্যাবুদ্ধি অতি সামান্য। আমার মনে হয় এই জুটির করা সেইসমস্ত কাজগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করলেই পাঠক এর উত্তর পেয়ে যাবেন।
এখন যে ছবিটির গান নিয়ে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি ঘটনাচক্রে এই গানগুলির সুরকারও সেই বিখ্যাত রাজেশ রোশন সাহেব। ছবির নাম ‘আসমান সে উঁচা (১৯৮৯)’। পরিচালক মেহুল কুমারের পরিচালনায় জিতেন্দ্র, গোবিন্দা, সোনম, অনিতা রাজ অভিনীত এই ছবির সংগীত পরিচালক সেই এক ও অদ্বিতীয় রাজেশ রোশন। গীতিকার ইন্দিবরের কথায় এই ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া গানের সংখ্যা দুই। গান দুটি যথাক্রমে—
১. ‘জিয়া প্যায়ার মাঙ্গে জিয়া…’ (সহশিল্পী : সাধনা সরগম)
২. জিন্দেগী সে যব মিলে…’ (এ গানে কুমার শানুর সহশিল্পীরা হলেন আনোয়ার ও আরেক ভট্টাচার্য গায়ক অভিজিৎ। তিনি তখন নিজের নামের সাথে তার পিতৃদত্ত ‘ভট্টাচার্য’ টাইটেল ব্যবহার করতেন।)
সানি দেওলের বিখ্যাত ‘ঘায়েল ১৯৮৯’ ছবিটার কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় সানি দেওলের নজর কারা অভিনয় ছবিটিকে এক অন্য মাত্রা দিতে সক্ষম হয়েছিল। বাপী লাহিড়ীর সুরে আশা ভোঁসলে, সাব্বির কুমারের সাথে কুমার শানুর পরিণত কণ্ঠের সেই বিখ্যাত গান—’সোচনা ক্যায়া যো ভী হোগা দেখা যায়েগা…’। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই গানটার একটা স্যাড ভার্সনও বাপী লাহিড়ী কুমার শানুকে দিয়ে রেকর্ড করিয়ে ছিলেন। এবং যথারীতি ছবিতেও সেই গান ব্যবহার করা হয়েছিল।’ফুলো কা সংগ সবকো হোতা নেহি নসীব…’ ১৯৮৯ তে রেকর্ড হওয়া এই গানটিতে কুমার শানুর সহশিল্পীরা ছিলেন সুরেশ ওয়াডকার ও কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। গানের গীতিকার মহেন্দ্র দেহলভি, সুরকার ঊষা খান্না। ছবির নাম ‘মেহেন্দি বন গয়ে খুন’। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন জুহি চাওলা, সুমিত সয়গল ও আরো অনেকে।
‘ফুলো কা সংগ…’ ছাড়াও এই ছবিতে কুমার শানু আরো একখানা সোলো গান গেয়েছিলেন। গানটি হলো—’মেরি হসরতোঁ কা জানাজা উঠাকে/ তুমহে ক্যায়া মিলা হ্যায় মুঝকো মিটাকে…’
‘মেহেন্দি বন গয়ে খুন’ রিলিজ করে ১৯৯১ সালে।এবার যে ছবিটির গানের কথা বলব সেটি হলো বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘হামারি শাদী ১৯৮৯’। এই ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া দুটি গানের উল্লেখ পাওয়া যায়। দুটোই সোলো গান। গানগুলির মধ্যে প্রথমটা যদি হয়— ‘অ্যায়সা হোতা হ্যায় নগর…’
তো দ্বিতীয়টা অবশ্যই ‘হ্যায় ইয়ে তো…’ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এই ছবির সংগীত পরিচালকের নাম হিসেবে আমরা দু’জনের নাম পাচ্ছি। এঁদের মধ্যে একজন, যিনি উপমহাদেশের কিংবদন্তী তথা তুখোড় সংগীত ব্যক্তিত্ব সলিল চৌধুরী। অন্যজন সঞ্জয় চৌধুরী। এখন প্রশ্ন হলো কে এই সঞ্জয় চৌধুরী? তার পরিচয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে যেটুকু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে তাতে করে জানা যাচ্ছে যে, কিংবদন্তী সুরকার, গীতিকার তথা নাট্যকার সলিল চৌধুরী ও বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সবিতা চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র হলেন সঞ্জয় চৌধুরী। তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে এই প্রতিবেদন লেখার সময় এই সেদিন পর্যন্ত এই ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া গান দু’টির সুরকার আদকে কে? সেটা নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল। অবশেষে সেই ধোঁয়াশা দূর করলেন তিনি, যাকে নিয়ে এই প্রতিবেদনের অবতারণা, সেই কুমার শানু স্বয়ং। এবং আপাত জটিল এই কাজটি সফলতার সাথে করতে যিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তিনি এই কালের সম্পাদক শোভনলাল রাহা মহাশয়। তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় শানুদা জানিয়েছেন, এই ছবিতে তিনি সলিল চৌধুরীর সুরে গান গেয়েছিলেন। শুধু তাই নয় কথা প্রসঙ্গে তিনি এও জানান, সলিল দুহিতা অন্তরা চৌধুরী একটি বাংলা সিরিয়ালে ওনার বাবার তৈরি করা সুর যা কিনা অনেকদিন আগেই করে রেখেছিলেন, তেমনই একটা গান তিনি শানুদাকে দিয়ে গাইয়েছিলেন।১৯৮৯ সালে ‘যোদ্ধা’ নামে আরো একটি হিন্দি ছবি রিলিজ করেছিল। সানি দেওল অভিনীত এ ছবির সুরকার ছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। এই ছবিতে গীতিকার আনজানের কথায় কুমার শানুকে দিয়ে সর্বমোট দুটি গান রেকর্ড করানো হয়েছিল।
১. দুনিয়া মে জীনা হ্যায় তো… (কণ্ঠে: কুমার শানু, অমিত কুমার ও অনুপমা দেশপাণ্ডে)
২. হোল ডে হোল নাইট দিল তরসে…(কণ্ঠে : কুমার শানু ও বেলা সুলাখে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ‘হোল ডে হোল নাইট’ গানটি অমিত কুমার ও অলকা ইয়াগনিকের কণ্ঠেও আছে। এবং ছবিতে অমিত কুমার ও অলকা ইয়াগনিকের ভার্সনটিই ব্যবহার করা হয়েছিল।পরের ছবি ‘দিন দাহাড়ে’। খাতায় কলমে ১৯৯০ সালে এই ছবি রিলিজ করলেও এর গান ১৯৮৯ সালেই বাজারে চলে এসেছিল। ছবির সুরকার জীতু-তপন। এই ছবির গানের তালিকায় যদি চোখ বোলানো যায় দেখা যাবে এই ছবিতে কুমার শানু সর্বমোট তিনটি গান গেয়েছেন। গানগুলি হলো যথাক্রমে—
১. ‘কাম জাহাঁমে…’
২. ‘লড়ি লড়ি যবসে নজর…’ এটি একটি দ্বৈত সংগীত। এই গানটিতে যিনি কুমার শানুর সহশিল্পী ছিলেন তিনি সুর সম্রাজ্ঞী আশা ভোঁসলে।
৩.’গণপতি বাপ্পা মোরিয়া…’ এই গানের সহশিল্পী আর এক দিকপাল সংগীত শিল্পী সুরেশ ওয়াডকার।
এই ছবিটা ছাড়াও ওই বছরই
জীতু-তপনের সাথে আরো একটি ছবিতে কুমার শানু কাজ করেছিলেন। ছবির নাম,
‘কসম ঝুট কি (১৯৮৯)’। এই ছবিতে শানুদা’র গাওয়া দুটি গানের সন্ধান পাওয়া যায়। দুটোই সোলো গান। প্রথম গান
‘ম্যায় আবারা শহেজাদা হুঁ…’ এই গানটি যদি একজন সুখী মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ হয়, তো দ্বিতীয়টি, ‘আপনি আপনি কিসমত হ্যায় ইয়ে…’ দস্তুর মত করুণ রস অবলম্বন করে গাওয়া।
এবার যে ছবির গান নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি এটা কুমার শানুর কেরিয়ারের একটা মাইলফলক বললেও বোধকরি অত্যুক্তি হবে না। আশিকী পূর্ববর্তী কুমার শানু যতগুলি গান করেছেন তা নিয়ে পর্যালোচনা করতে বসলে এই গানটি তালিকার শীর্ষে থাকার কথা। সম্ভবত তার কেরিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ গান হিসেবে এটাকেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। বস্তুত এই গানটির কথা উল্লেখ না করলে তালিকাটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
কতকটা ইচ্ছে করেই একে প্রথমের দিকে না রেখে এত পরে আলোচনা করতে বসেছি। ওই হয় না কোন জলসায় যখন জলসার মূল যিনি শিল্পী থাকেন তাকে কতকটা ইচ্ছে করেই একেবারে শেষের দিকে মঞ্চে আনা হয়। উদ্দেশ্য থাকে যাতে করে অনুষ্ঠানের যাবতীয় আকর্ষণ শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। শুরুতেই তাকে মঞ্চে এনে ফেললে শ্রোতাদের উৎসাহ ওখানেই শেষ হয়ে যায়। পরের শিল্পীদের গান শোনার ক্ষেত্রে তাদের আর কোন আগ্রহ থাকে না। এও অনেকটা তাই। যাই হোক কথা না বাড়িয়ে গানের কথায় চলে আসি।
ছবির নাম ‘জুর্ম’। ‘জুর্ম’ ১৯৯০ সালে রিলিজ করলেও এ ছবির ১৯৮৯ সাল নাগাদ বাজারে চলে এসেছিল।
‘জব কোই বাত বিগড় যায়ে/ জব কোই মুশকিল পড় যায়ে/ তুম দেনা সাথ মেরা ও হম নাবাব…’
কুমার শানুর গাওয়া এই গানটি এই ছবির সব থেকে আলোচিত গান।
ছবির সুরকার রাজেশ রোশনের সুর করা বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে এই গানটি নিশ্চিত করেই অনেক উপরের দিকে থাকবে। যদিও এই গানের সুর মূল গান ‘দ্য জার্নিম্যান’-এর ‘ফাইভ হানড্রেড মাইলস’ থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে। মূল গানটি ছিল আদতে একটি আমেরিকান লোক সংগীত। কিন্তু তা সত্বেও ‘জব কোই বাত…’ গানটিতে একটা আলাদা ফ্লেভার আছে। সেই সাথে কুমার শানুর স্বতন্ত্র গায়নশৈলী ও তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে গানখানি আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কুমার শানু নিজেও তাঁর গাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ গানগুলির মধ্যে এই গানটিকে তার পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানে রাখতে পছন্দ করেন। মজার ব্যাপার হলো গানটি প্রকাশ্যে আসার পর সেই পরিমাণ জনপ্রিয়তা পায়নি, যতটা বর্তমানে পেয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘মিউজিক থেরাপি’ নামে একটা চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আজকাল খুব হইচই হচ্ছে। এই পদ্ধতি এমনই একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি যাতে করে চিকিৎসকেরা অবিশ্বাস্য রকমের সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এই পদ্ধতিতে জড় মস্তিষ্কে প্রাণের সঞ্চার ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। এবং এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসকেরা রীতিমত উচ্ছ্বসিত। এই থেরাপির তালিকায় সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘জব কোই বাত বিগড় যায়ে’। বিশ্বের বহু দেশে এই গানটিকে অব্যর্থ মেডিসিন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। শোনা যায় চীনের এক ভদ্রমহিলা ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়ে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরে কুমার শানুর গাওয়া এই গানটি শুনে তিনি পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি শুধু এই গানটিই নয় কুমার শানুর গাওয়া আরো একটি বিখ্যাত গান ‘কুছ না কহো কুছ ভি না কহো…’ রাহুল দেব বর্মণের সুর করা গানটিও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মিউজিক থেরাপিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।মিঠুন চক্রবর্তী মাধুরী দীক্ষিত ও নতুন অভিনীত ‘মুজরিম’ ছবিটার কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে? এই ছবিটি মূলত একটি হিন্দি ছবি। মিঠুন-মাধুরী একসাথে যে ক’টি হিট ছবি সিনেমা-প্রেমীদের উপহার দিয়েছেন তার মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯৮৯ এর এই ছবিটিতে মিউজিক করেছিলেন অনু মালিক। এই ছবিতে কুমার শানুর একক কণ্ঠে চমৎকার একখানি গান আছে। হিন্দি ছবিতে হিন্দি গান থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ছবিটি তার ব্যতিক্রম। এই ছবিতে একটা বাংলা গান ব্যবহার করা হয়েছিল। এবং গানটি গেয়েছিলেন কুমার শানু। গানের কথা লিখেছিলেন মুকুল দত্ত। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও ঘটনা সত্য। গানটি ছি—
‘অপরাধী তো সারা দুনিয়া/অপরাধী আমায় বলো না/ যে পড়ল ধরা সেই হলো দোষী/বাঁচল যে সে তো সেয়ানা…’
কুমার শানুর দরদী গলায়
তৎকালীন গানের যে ধারা তার অভ্রান্ত প্রতিফলন গানটিতে ফুটে উঠেছে। এই গানটির একটি হিন্দি ভার্সন আছে। ‘মুজরিম না কেহ না মুঝে লোগো…মুজরিম তো সারা জামানা হ্যায়…’। হিন্দি ভার্সনটি গেয়েছিলেন মহঃ আজিজ বা মুন্না আজিজ।১৯৮৯ সালে যোদ্ধা নামে আরো একটি হিন্দি ছবি রিলিজ করেছিল। সানি দেওল অভিনীত এ ছবির সুরকার ছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। এই ছবিতে গীতিকার আনজানের কথায় কুমার শানুকে দিয়ে সর্বমোট দুটি গান রেকর্ড করানো হয়েছিল।
১. দুনিয়া মে জীনা হ্যায় তো… (কণ্ঠে: কুমার শানু, অমিত কুমার ও অনুপমা দেশপাণ্ডে)
২. হোল ডে হোল নাইট দিল তরসে…(কণ্ঠে : কুমার শানু ও বেলা সুলাখে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই ‘হোল ডে হোল নাইট’ গানটি অমিত কুমার ও অলকা ইয়াগনিকের কণ্ঠেও আছে। এবং ছবিতে অমিত কুমার ও অলকা ইয়াগনিকের ভার্সনটিই ব্যবহার করা হয়েছিল।১৯৮৯ সাল নাগাদ রাহুল দেব বর্মন একটি ছবিতে সুর দিয়েছিলেন। তার উইকি ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে আমরা জানতে পারি এই ছবির জন্য তিন তিনি কুমার শানুকে দিয়ে একটি গান রেকর্ড করিয়েছিলেন। ছবির নাম ‘জীবন সাত সুরো কা সংগম’।
গানের কথা লিখেছিলেন মজরূহ সুলতানপুরি। কুমার শানুর গাওয়া সেই গানটির মুখরাটা ছিল অনেকটা এইরকম—’ইয়ে জীবন সাত সুরো কা সংগম…’
যদিও এখনও পর্যন্ত এই দুষ্প্রাপ্য গানটির হদিস করে ওঠা সম্ভবপর হয়নি।১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সি আই ডি। যাতে অভিনয় করেছিলেন বিনোদ খান্না। কল্যাণ জি-আনন্দ জি সুরারোপিত যে ছবির অডিও গান ১৯৮৯ তেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। এই ছবিতে অলকা ইয়াগনিক ও কুমার শানুর দ্বৈত কণ্ঠের গানটি ছিল—’তেরি না না না…’একজন প্লে-ব্যাক সিংগারের খ্যাতি অখ্যাতির মানদণ্ড নির্ধারণ করার মাধ্যম হিসেবে আমাদের দেশে হিন্দি ছবির গানকেই আগাগোড়া প্রাধান্য দেওয়ার রেওয়াজ চালু আছে। এটা ভুল কিছু তাও না। অতীতের যত নামকরা কণ্ঠশিল্পী আছেন, তাঁরা হিন্দি গানের মাধ্যমেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যে কারণে আমরা এতক্ষণ ধরে মূলত হিন্দি ছবির গান নিয়েই আলাপ আলোচনা চালাচ্ছিলাম। যদিও এই সময়টাতে হিন্দি ছবির গান ছাড়াও কিছু ভালো বাংলা গানও কুমার শানু গেয়েছেন। তার মধ্যে আধুনিক গানের সংকলন যেমন আছে, তেমনি কিছু আছে ছায়াছবির গান। বাঙালি সংগীত শিল্পীর বাংলা গান নিয়ে কথা হবে না, তা কখনও হয়। এবার আমরা কুমার শানুর সেই পর্যায়ের বাংলা গানগুলোকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করব। আমার পূর্ববর্তী প্রতিবেদন শানু ভট্টাচার্য থেকে কুমার শানু ওঠার জার্নিতে ওনার গাওয়া বেশ কিছু বাংলা গানের কথা আলোচনা করা হয়েছে। কাজেই সেইসব গানের কথা এখানে অযথা আর টেনে আনতে চাইছি না। এগুলো ছাড়াও বেশ কিছু ভালো গান তিনি শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন। আজ আমরা সেই সমস্ত গানগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
শুরুটা করব ‘অমর শিল্পী’ দিয়ে। কেননা এই একটা সংকলন যা কুমার শানুকে রাতারাতি গলি থেকে রাজপথে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। অমর শিল্পী নিয়ে আমার নিজের কিছু টুকরো স্মৃতি পাঠকের সাথে শেয়ার করার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না। সেটা একটু বলি। আশির দশকের একেবারে শেষের দিকে, সালটা ছিল ১৯৮৮। সেবার পুজোর মুখে হঠাৎ দেখি সব জায়গায় ‘অমর শিল্পী তুমি কিশোর কুমার..’ গান বাজছে। কে যেন বলল, এটা কিশোর কুমারের গান। আমার কম বয়স, গান টান তেমন না বুঝলেও মনে খটকা জাগল— কিশোর কুমার নিজেই নিজেকে অমর শিল্পী বলছে? ভারী অদ্ভুত তো? নিজের ঢাক নিজেই পেটাচ্ছেন, তা কী করে হয়? কে একজন ক্যাসেটের কভার দেখিয়ে দেখিয়ে বলল, এই ছেলেটা নতুন এসেছে বাজারে। নাম কুমার শানু। হুবহু কিশোর কুমারের মত গলা। ক্যাসেট কভারে বড় বড় করে কিশোর কুমারের ছবি, ক্যাসেটের একেবারে নীচে ছোট্ট করে মূল গায়কের ছবি। ‘অমর শিল্পী’র গানের কথা লিখেছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরকার ছিলেন আরেক বঙ্গসন্তান বাবুল বোস।
পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে প্রতিটা পুজো প্যান্ডেলে শুনছি ‘অমর শিল্পী’ অ্যালবামের গানগুলো বাজছে। শুধু কি অমর শিল্পী? ‘তুমি যদি থাকতে..’ বা ‘কল্কাপাড়ের নীল শাড়িতে প্রথম দেখেছি…’ অথবা ‘এইভাবে দু’জনকে যারা আজ দেখে…গানগুলো খুব চলছে। সকাল থেকে রাত-দিন কম করেও পঞ্চাশবার এই একই গান এক নাগাড়ে বেজে গেছে। এক গান বারবার শুনলে সেই গানের প্রতি একঘেয়েমি চলে আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটল ঠিক উল্টো। একঘেয়েমি তো আসেইনি উল্টে এই শিল্পীর গান আরো বেশি করে শোনার ব্যাপারে শ্রোতাদের মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হলো। আজ এতবছর বাদে এসেও সেই আগ্রহে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি।
এরপরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে খুব সম্ভবত অমর শিল্পীর অভাবনীয় সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সুপার ক্যাসেটের নির্মাতারা ‘অমর শিল্পী’র ধাঁচে কুমার শানুর গাওয়া ‘কিশোর কুমার’ সংকলটি বাজারে নিয়ে এলেন। এই সংকলটির সুরকার ছিলেন বাবুল বোস। গীতিকার সেই আদি ও অকৃত্রিম পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়-কুমার শানু-বাবুল বোস এই ত্রয়ী বেশ কিছু ভালো মানের বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গান আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই সংকলনটি তার মধ্যে একটি। যদিও জনপ্রিয়তার নিরিখে এই ত্রয়ীর পূর্ববর্তী কালজয়ী সংকলন ‘অমর শিল্পী’র তুলনায় এটি অনেকটাই পিছিয়ে থাকবে। তারপরেও কুমার শানুর গাওয়া বাংলা গান নিয়ে আলোচনায় এই সংকলনটির প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। এবার ‘কিশোর কুমার’ সংকলটির গানের তালিকায় একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক—
১.কিশোর কুমার…
২.ফেল করলে বাবা-মা বকলে…
৩.মহারাণী সেজে আছো ভাড়া করা পোষাকে…
৪.সারা জনম ধইরা বিধি সুখের মুখ দ্যাখলাম না…গোটা আশির দশক জুড়ে অগুনতি বাংলা ছবি রিলিজ করেছে। তার মধ্যে ‘অতিক্রম ১৯৮৬’ একটি। সম্প্রতি একটি প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্রে সুরকার তপন ভট্টাচার্য (তপনদার একটি বড় পরিচয় তিনি কুমার শানুর অগ্রজ অর্থাৎ বড় ভাই।) ‘অতিক্রম’ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করেছিলেন। তপনদা’র সেদিনকার করা স্মৃতিচারণার অংশটুকুই হুবহ এখানে তুলে ধরা হলো—
‘আমার বন্ধু নির্মল পালের প্রযোজনায় তখন একটি বাংলা ছবি তৈরি হচ্ছিল। ছবির নাম অতিক্রম। ছবিতে চিরঞ্জিৎদা, দেবিকা মুখোপাধ্যায়, পাপিয়া অধিকারী, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে আমিও অভিনয় করেছিলাম। আমি চিরঞ্জিতদার কলেজ হস্টেলের বন্ধুর রােলটা করেছিলাম। একদিন কথা বলতে বলতে নির্মল বলেছিল, এই ছবির জন্য নতুন গায়ক খুঁজছে ও। তখনই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম আমি। বলেছিলাম, তাহলে আমার ভাইকে নাও না।
নির্মল বলল, ভাই মানে শানু তাে? আমি বললাম,হ্যাঁ। টাকা-পয়সা তােমার যেটা ঠিক মনে হয় দিও।নির্মল রাজি হয়ে গেল।
শানু তখন মুম্বইয়ে। ওকে ফোন করে নির্মলের
সঙ্গে কথা বলিয়ে দিলাম। সালটা সম্ভবত
১৯৮৬। তার আগেই শানুর প্রথম আধুনিক
বাংলা গানের ক্যাসেট তরঙ্গ রিলিজ করেছে
টি-সিরিজ থেকে। নির্মল ওকে কলকাতা আসতে বলল। আমার কথাতেই শানুর জন্য ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটে পাঠিয়েছিল নির্মল। সেই প্রথম বাংলা ছবিতে শানুর প্লে-ব্যাক।’অতিক্রম ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া গানের সংখ্যা দুই। দুটোই দ্বৈত কণ্ঠে। গান দুটি হলো—
১. সাগরের সীমা খুঁজে অসীমে হারিয়ে যাই (কণ্ঠে: কুমার শানু ও হৈমন্তী শুক্লা)
২.অঞ্জলী নিয়ে আসে দু’হাতে (কণ্ঠে : কুমার শানু ও আশা ভোঁসলে।পরের ছবি ‘অঙ্গার (১৯৮৯)’। এই ছবিটির সুরকার ছিলেন মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কুমার শানু প্রচুর কাজ করেছেন। অঙ্গার ছবিটি মূলত একটি সামাজিক ছবি। তাপস পাল অভিনীত এই ছবিটিতে কুমার গাওয়া একটি গান গেয়েছিলেন। গানটি ছিল—’না দিয়ো না, দিয়ো না আবীর…’
গানটিতে ওনার সহশিল্পী ছিলেন অনুপমা দেশপাণ্ডে।এই বছরই আরো একটি বাংলা ছবিতে কুমার শানুকে আমরা গাইতে দেখি। ছবিটির নাম ‘অনুরাগ (১৯৮৯)’। এই ছবিটির সুরকার ছিলেন হিন্দি ছবির জনপ্রিয় সুরকার ঊষা খান্না। গানটি ছিল—’এই শোনো, কী বলো…’
মুকুল দত্তর কথায় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কুমার শানু ও অলকা ইয়ানিক।১৯৮৯ এর বিখ্যাত ছবি ‘প্রণমি তোমায়’। প্রভাত রায় পরিচালিত, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও অর্জুন চক্রবর্তী অভিনীত এ ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। এই ছবিতে কুমার শানু ও মহঃ আজিজের গাওয়া ‘এই যে আকাশ আর এই যে মাটি…’ সেইসময় বিরাট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।এই পর্যায়ে ছবির গান ছাড়াও কুমার শানু বেশ কিছু কিশোর কুমারের কভার ভার্সন ও একটি গজল সংকলনে কাজ করেছিলেন।১৯৮৮ সালে টি-সিরিজ থেকে রিলিজ হওয়া গজল সংকলন— গুলাল। যার মিউজিক করেছিলেন সর্দার মালিক(যিনি আবার বিখ্যাত সংগীত পরিচালক অনু মালিকের পিতৃদেব)। হসরত জয়পুরির কথায় এই অ্যালবামের গানগুলো শুনতে শুনতে একটা কথাই মনে হয় এই জাতীয় গান গাওয়া রীতিমত শক্ত ব্যাপার। অথচ কুমার শানু অবলীলায় গানগুলো গেয়ে দিয়েছেন। তাঁর নিজস্ব গায়ন শৈলীতে গানগুলো হয়ে উঠেছে অনবদ্য, সুখশ্রাব্য।আমরা সকলেই জানি এই পর্যায়ে টি-সিরিজ থেকে প্রকাশিত ‘কিশোর কি ইয়াদেঁর’ গানগুলো বিরাট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ১ থেকে ১০ ‘কিশোর ইয়াদেঁ’র মোট দশটি সংকলন ক্যাসেট আকারে বাজারে এসেছিল। বর্তমানে সি.ডির দৌলতে সেই সংকলনের সর্বমোট সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৮। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে বাকি দু’টি সংকলন অর্থাৎ ৯ আর ১০ এই দু’টি কোথায় গেল? আসলে অডিও ক্যাসেটের তুলনায় সি.ডিতে অনেক বেশি গান ধরানো সম্ভব। খুব সম্ভবত সেই কারণেই ৯ আর ১০ বাদবাকি দু’টি সংকলনের গানগুলিকে ভাগাভাগি করে অন্য সংকলনগুলির মধ্যে অনায়াসে ঢুকিয়ে দেওয়া গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ‘কিশোর কি ইয়াদেঁ’র সবকটা ভল্যুম আশিকীর আগে রিলিজ হয়নি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভল্যুম আশিকির অনেক পরে বাজারে এসেছিল। এবারে আমরা দেখে নেব, ‘আশিকি’র পূর্বে ‘কিশোর কি ইয়াদেঁ’র ঠিক কোন কোন সংকলনগুলো প্রকাশিত হয়েছিল।১.কিশোর কি ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ১ (১৯৮৮)
২. কিশোর কি ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ২ (১৯৮৮)
৩. কিশোর কি ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ৩ (১৯৮৯)
৪.কিশোর কি ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ৪ (১৯৮৯)
৫. কিশোর কি ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ৫ (১৯৮৯)’কিশোর কি ইয়াদেঁ’ সংকলনের গানগুলি ছিল মূলত কিশোর কুমার গাওয়া সোলো গানের রিমেক ভার্সন। এগুলো ছাড়াও ‘ইয়াদেঁ’ নামের একটা জনপ্রিয় সিরিজ টি-সিরিজ বাজারে নিয়ে এসেছিল। যার প্রতিটা সংকলন অতীতের দিকপাল গায়ক-গায়িকাদের বিখ্যাত সব ডুয়েট গান দিয়ে সাজানো হয়েছিল। ১ থেকে ৩৩ মোট তেত্রিশটি সংকলনের মধ্যে কুমার শানুর গাওয়া বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সংকলনও ছিল। সংকলনগুলি হলো, ১১, ১২, ১৬, ১৭, ২০, ২২, ২৩, ও ২৪। মজার বিষয় হলো তাঁর গাওয়া সেই সমস্ত গানগুলির মধ্যে শুধু যে কিশোর কুমারের গাওয়া ডুয়েট গানই ছিল তা কিন্তু না, এর মধ্যে এমন বেশ কিছু গান ছিল যেগুলো কিশোর কুমার নন অতীতের অন্য নামকরা শিল্পীদের গাওয়া গান। বলাই বাহুল্য ‘কিশোর ইয়াদেঁ’র মত কুমার শানুর গাওয়া ইয়াদেঁ’র গানগুলিও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
আশিকী’র আগে কুমার শানুর গাওয়া ইয়াদেঁ’র যে সমস্ত সংকলনগুলি প্রকাশিত হয়েছিল তার তালিকা নীচে দিয়ে দেওমা হলো—
১.ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ১১ (১৯৮৮)
২.ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ১২ (১৯৮৮)
৩.ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ১৬ (১৯৮৯)
৪.ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ১৭ (১৯৮৯)
৫. ইয়াদেঁ ভল্যুম নং ২০ (১৯৮৯)

Advertisement
Developed by