নন্দীগ্রাম আন্দোলন, আন্দোলনের কাণ্ডারী শুভেন্দু অধিকারী ও সাংবাদিক সুকুমার মিত্র এক কথায় সমার্থক। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহলের উত্তাল দিনগুলিতে তাঁর প্রতিবেদনের জন্য রাজ্য তথা দেশবাসী উন্মুখ হয়ে থাকত। রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নির্ভীক, আপোষহীন, সত্যনিষ্ট এই সাংবাদিক নন্দীগ্রাম কভারেজের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁকে খুন করার জন্য তৎকালীন শাসকদল কম ফন্দি ফিকির আঁটেনি। ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের ভালবাসাকে ভর করে মাটি কামড়ে থেকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ‘নিশানের নাম তাপসী মালিক’ গ্রন্থে কবীর সুমন লিখেছেন ১৪ মার্চ, ২০০৭ নিখোঁজ সাংবাদিক সুকুমার মিত্রকে নিয়ে রোমহর্ষক কাহিনী। কলকাতায় ধর্মতলার সভায় বলেছিলেন, ‘সাংবাদিক সুকুমার মিত্র-খুন হলে আমি চারজন হার্মাদ খুন করব।’ নন্দীগ্রাম হার্মাদকূল দখল করতে পারে এই আশংকায় সব সাংবাদিকরা নিরাপদ ডেরায় আশ্রয় নিলেও হলদি নদী ও তালপাটি খাল অববাহিকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন শাসককূলের অত্যাচারের সংবাদ সংগ্রহের জন্য। ‘সাংবাদিক সুকুমার মিত্রর মুন্ডু চাই’ ব্যানার নিয়ে সিপিএম খেজুরিতে মিছিলও করেছিল। সকলকে তাক লাগিয়ে সেই দিনই তিনি খেজুরির কুঞ্জপুরে সিপিএম জোনাল সম্পাদক বিজন রায়ের সাক্ষাৎকার নিতে সেই রাতে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাঁর সাংবাদিক জীবনের নানা ঘটনা ও কৌশল নিয়ে গবেষণার সুযোগ রয়েছে। প্রবাদপ্রতীম সেই সাংবাদিক সুকুমার মিত্র সূর্যোদয়ের ১৪ বছরে কলম ধরলেন এইকালের জন্য।
‘দীপাবলীর আলোকে ম্লান করে দিয়েছে নন্দীগ্রামের ঘটনা।’ ১০ নভেম্বরে সিপিএমের ‘সূর্যোদয়ে’র ঘটনায় শিহরিত হয়ে এমনটাই বলেছিলেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। হাজার হাজার গ্রামছাড়া আর্ত মানুষদের দেখতে তিনি ফের গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামে। এর আগেও ১৪ মার্চের ঘটনার পরও তিনি নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন। ১০ নভেম্বর ১৪ বছরে পা দেবে নন্দীগ্রামে সিপিএমের ‘সূর্যোদয়’-এর। আর মাঝে মাত্র কয়েকটা মাস পার হলেই ১৪ মার্চ, ২০২১ পনের বছর পূরণ হবে নন্দীগ্রামে পুলিশ ও সিপিএম হার্মাদদের যৌথ গণহত্যা অভিযানের। নভেম্বরের শীতে হাড় হিমকরা পরিস্থিতি তৈরি করে চারদিক থেকে ঘিরে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রেখে হার্মাদবাহিনীর নন্দীগ্রাম দখলের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ লক্ষণ শেঠের কর্মসূচিতে সিলমোহর দিয়েছিল আলিমুদ্দিনওয়ালারা। রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধি বলেছিলেন, দীপাবলীর আলোকে ম্লান করে দিয়েছে নন্দীগ্রামের ঘটনা। অপারেশন সূর্যোদয়ে শহিদ হয়েছিলেন শেখ রেজাউল ও মালতী জানা। আর ওই দিনের ঘটনায় নিখোঁজ সাত জনের সন্ধান আজও মেলেনি। এর আগে ১৪ মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন আরও তিন জন। ২০০৭ সালে টানা ১১ মাস লড়াই-এর পর সিপিএমের এলাকা দখলের জন্য ফের নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ ক্যাম্পগুলি তুলে নিয়ে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রেখে ১০ নভেম্বর শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর হামলা, হত্যালীলা, লাশ পাচার, গুম, অপহরণের ঘটনা সবই ঘটেছে অপারেশন সূর্যোদয়ে। তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু ও বামফ্রন্টনেতা বিমানবাবু বললেন সূর্যোদয় হয়েছে, সূর্যের তাপও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ,সত্যি তাপ পাওয়া গেল বিধানসভার উপনির্বাচনে নন্দীগ্রামে বামপ্রার্থীর মহম্মদ ইলিয়াসের শোচনীয় পরাস্ত হওয়া। তারপর ২০০৮এর পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন, সর্বোপরি ২০১১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বামশাসকদের কোমরটা ভেঙ্গে গেল। রাজ্যে এল পরিবর্তন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকার ক্ষমতায় এল। নন্দীগ্রামে স্বতস্ফুর্ত গণবিদ্রোহের সূত্রপাত কিন্তু ঘটে গিয়েছিল তারও আগে। ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৬। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্তে তৎকালীন সিপিএম সাংসদ ও হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান লক্ষণ শেঠ প্রকাশ্যে দলীয় সভায় ঘোষণা করেছিলেন নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল(সেজ) গড়া হবে। সিপিএমের সেই দলীয় সভায় শুরু প্রতিবাদের গুঞ্জন পরে আগ্নেয়গিরির আকার ধারন করে। নন্দীগ্রামে লক্ষণ শেঠের সভা থেকে ফিরে সোনাচূড়া-সহ প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হাবের মৌজাগুলিতে সিপিএম দলীয় কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে বিদ্রোহের সৃষ্টি করেছিল। এক বিরাট অংশের মানুষ সেদিন দৃঢ় পণ করলেন সেজের জন্য জমি দেওয়া হবে না। সেদিনের সিপিএম নেতা লক্ষণ শেঠের অনুগামীরা জমি নিতে মরিয়া হয়ে সশস্ত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সাধারণ গ্রামের কৃষকদের উপর। ৩ জানুয়ারি, ২০০৭ কালিচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি লাগাতে এসে স্বতস্ফুর্ত হাজার হাজার কৃষকের গণপ্রতিরোধের মুখে বাধা পায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। ভুতার মোড়ে(বর্তমান নাম শহিদ মোড়) বড় বাঁধের উপর জমায়েত হওয়া গ্রামবাসীদের লক্ষ্যড় করে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে বুদ্ধেদব ভট্টাচার্যের পুলিশ বাহিনী। এর পরের দিন ৪ জানুয়ারি, ২০০৭ নন্দীগ্রামের সকলস্তরের মানুষদের নিয়ে গঠিত হয় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি(BUPC)। শুরু হয় সংগঠিত শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলন। বহু মানুষ, বহু দল, বহু নেতা থাকলেও একথা অনস্বীকার্য উদার মানসিকতা নিয়ে সেদিন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হাল ধরেছিলেন সেদিনের দক্ষিকণ কাঁথির বিধায়ক(বর্তমানে রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী) শুভেন্দু অধিকারী। গ্রামের মানুষ পুলিশ ও সিপিএম হার্মাদদের হাত থেকে এলাকাকে বাঁচাতে রাস্তাঘাট কেটে গণ আন্দোলের এক স্বাধীন ভূ-খণ্ড তৈরি করেছিলেন নন্দীগ্রামে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে তালপাটি খালের দক্ষি ণে খেজুরিতে। হলদি নদীর ওপার মহিষাদলে, হলদিয়ায়। ১৪ মার্চ, ২০০৭- এর পর গোটা দুনিয়ার মানুষ জেনে গেল নন্দীগ্রামের সাহসী সেজ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা। আর একই সঙ্গে উন্মোচিত হয়ে গেল বামফ্রন্ট সরকারের বর্বরোচিত পুলিশি অভিযানের নামে গণহত্যায় শাসকদলের ক্যাডারদের নির্লজ্জ হাত ধরাধরির ঘটনা। সফল হল না পুলিশি অভিযানের উদ্দেশ্য। নন্দীগ্রামের মানুষ বশ্যতা স্বীকার না করে প্রতিরোধের পথকে আরও শক্ত করে আগলে ধরলেন। এরপর সিপিএম ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বহু চেষ্টা করলেও ২০১৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচন ও ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনার নানা চেষ্টা করেও শক্তি খুইয়েছে রাজ্যের বামফ্রন্ট। দিশাহারা অবস্থা সিপিএমের। কংগ্রেস, বিজেপি সকলেই পর্যুদস্ত হয়েছে। এসবই সকলের জানা। এসব তো গেল নিছক কালপঞ্জী। কিন্তু আন্দোলনে নন্দীগ্রামের আত্মত্যাগ, আবেগ, ক্ষয়-ক্ষতি, মিথ্যা মামলার ঝুঁকি নিয়েও পিছু না হঠার ঘটনাকে ভুলে যাওয়া যায় না। সেদিনের খুনে, ধর্ষক, লুঠেরা অপরাধীরা প্রকাশ্যে আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরাধী পুলিশ আধিকারিকদের শাস্তি হয়নি, হয়েছে পদোন্নতি। এসব তিলে তিলে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকারীদের মধ্যে, নির্যাতিতাদের মধ্যে প্রশ্ন থেকে চাপা ক্ষোভ না হলেও অসন্তোষের যে সৃষ্টি করেছে তা অস্বীকার করা যাবে না। আর এই অসন্তোষ থেকে তাঁদের মধ্যে আজ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শহিদদের কথা ৩ জানুয়ারি, ৭ জানুয়ারি, ১৪ মার্চ, ২৭ অক্টোবর ও ১০ নভেম্বর ক্যালেন্ডারে এই দিনগুলি দেখে অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। সারা বছর কোনও আন্দোলন নেই, শুধু এই দিনগুলি এলে তা উদযাপন করা। তবে প্রাক্তন সাংসদ বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ব্যক্তিগত ও আন্তরিক উদ্যোগে শহিদ পরিবার ও নির্যাতিতাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে শিক্ষাি, কর্মসংস্থান সহ নানাভাবে আজও নিয়মিত সাহায্য করে থাকেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সেদিনের আন্দোলনের মুখগুলিকে পিছনে ঠেলে একদল ক্ষমতালোলুপ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর জীবনধারা ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বহু প্রশ্ন রয়েছে। উঠেছে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগও। এসব কাঙ্খিত নয় নন্দীগ্রামের কাছে। গোটা রাজ্য তথা দেশবাসী আজও নন্দীগ্রামের সাহসী আন্দোলন নিয়ে গর্ববোধ করে থাকেন। তাছাড়া নন্দীগ্রামে কোনও ধরনের ফাটল কেবল নন্দীগ্রামের সমস্যা নয় তা গোটা রাজ্য-রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে অবশ্যম্ভাবীভাবে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেড় দশক পরেও সিপিএমের আর ঘুরে দাঁড়ানো হল না। এটা যেন শাসক দলের নেতৃত্ব ভুলে না যান।
১৪ মার্চের গণহত্যার ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআই-এর উপর থাকলেও ২০০৭-এ বর্ষব্যাপী আরও ২০ জন আন্দোলনকারীর খুনের ঘটনার শাস্তি হয়নি দুষ্কৃতীদের। এসব খুনের তদন্ত ভার ছিল রাজ্য পুলিশের উপরই। কি হল সেই সব খুনের মামলার? পরিহাসের বিষয় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে নন্দীগ্রাম গণহত্যা মামলার ফাইলটি এক সময় খোওয়া যায়। পরে অবশ্য পাওয়াও গিয়েছিল। সিবিআই চার্জশিটে দোষী পাঁচ পুলিশ অফিসারকে বাঁচিয়ে চার্জসিট জমা দিয়েছে। সংসদীয় ক্ষমতার রাজনীতির বিন্যাসে নন্দীগ্রাম গণহত্যার ঘটনা এখন এক প্রশ্ন চিহ্নের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়া, ওসমানচক, গোকুলনগর, গড়চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া, সাউদখালি, রানিচক, সাতেঙ্গাবাড়ি, সাত নম্বর জালপাই, হাজরাকাটা, কেন্দেমারি, নন্দীগ্রাম জৈরুর মোড়, সামসাবাদ, আমগাছিয়া, জামবাড়ি, মহেশপুর, পারুলবাড়ির ত্রাণ শিবিরে কাটানো বা হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা আক্রান্ত মানুষগুলো আর স্বজনহারা পরিবারগুলির মুখ আজও স্মৃতিতে মোটেই ধূসর নয়। সিপিএমের সূর্যোদয়ের পর কত শুক্লপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ কেটে গিয়েছে। হয়ে গিয়েছে দশটি নির্বাচন। এসবই আছে সবই থাকবে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। নেই শুধু মেজর সুবেদার আদিত্য বেরা সহ ১১ জন নিখোঁজের কোনও সন্ধান। কে বা কারা গুম করল সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। নেই শাস্তি গণহত্যা ও গণধর্ষণকারীদের। নন্দীগ্রাম গণহত্যায় সিবিআই-এর পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট-এর বিরুদ্ধেও নেই আন্দোলন। নন্দীগ্রাম নিছকই এক ফালি ভূঃখণ্ড নয়। রাজ্যে পরিবর্তনে বহু আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও পরিবর্তনের ভরকেন্দ্রে ছিল নন্দীগ্রাম। বিশ্বের সেজ বিরোধী আন্দোলনে নন্দীগ্রাম একটি সফল উদাহরণ।সূর্যোদয়ের পর সিপিএম নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মর্ম অনুধাবন করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। সেদিনের সূর্যোদয়ের কাণ্ডারি লক্ষণ শেঠ ভারত নির্মাণ মঞ্চ গড়ে তারপর বিজেপি হয়ে এখন কংগ্রেসে। প্রায় দেড় দশক পরেও নন্দীগ্রামের আন্দোলনের মাটিতে পা রাখতে পারেনি সিপিএম। দলের শাখা কমিটি থেকে আঞ্চলিক কমিটি একের পর এক উঠে গেছে। বহু পার্টি অফিসের তালায় মরচে ধরেছে। শহিদের রক্তঝরা নন্দীগ্রাম এখনও হার্মাদবাহিনীর সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে একইভাবে সরব। নন্দীগ্রামের ঘটনা সিপিএমের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছে। বহু পরীক্ষা, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের মনে বিশ্বাস অর্জন করে পার্টির জনভিত্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বুদ্ধবাবু, বিমানবাবু, লক্ষণ শেঠরা তা ফুৎকারে ভেঙে দিয়েছিলেন দাম্ভিকতার উপর ভর করে। ভুলটা এখানেই। এই ভুল সংশোধন করতে রাজ্যবাসীর কাছে ক্ষমা না চেয়ে এগুলে অন্তত এই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির অন্ধ বিরোধিতা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
পরিশেষে নন্দীগ্রামের বর্তমান নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বলব, রক্তস্নাত পথে যে পরিবর্তন আপনারা এনেছেন তা যেন সামান্য একদল স্বার্থান্বেষী মানুষের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের ঘূর্ণিপাকে পড়ে ভুল বার্তা বাইরের জগতের কাছে না পৌঁছায়। আপনাদের কাছে প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবে বেশি তাই আপনাদের চলার পথকে সঠিক দিশায় রাখতে একটা কথাই বলব-‘আপনি মানুষকে দেখছেন দু-চোখ দিয়ে মানুষ কিন্তু আপনাকে দেখছে লাখো চোখ দিয়ে।’ শতবর্ষ আগে এই কথাটি একজন ইউরোপীয় দার্শনিক বলেছিলেন।চির সত্য এইকথাটি যেন আপনারা ভুলে না যান। যেমনটি ৩৪ বছরের শাসনে সিপিএম নেতারা ভুলে গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ নন্দীগ্রামে সিপিএম নেতা বিমান বসুর কথায় সূর্যোদয় আর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উক্তি-‘সূর্যোদয় হয়েছে, এবার সূর্যের তাপ পাওয়া যাবে।’ বর্বরোচিত ও নৃশংস ঘটনা যাঁরা ঘটালেন তাঁদের কোনও শাস্তি হল না শুধু নয় অনেকেই আজ বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে অপরাধীরা।