Breaking
11 Apr 2025, Fri

তৃণমূলে নয়, বিজেপির প্রাণ ভোমরা সিপিএমেই-স্মরণ করিয়ে গেলেন অমিত শাহ লিখছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সুকুমার মিত্র

রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসে বড়সড় ফাটল ধরানো সম্ভব নয়, বরং সিপিএমের তলানিতে ঠেকা ভোটই বিজেপির ভরসা সেটাই মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ৩৫৬-ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসনে ভোট নয়, ভোট করতে হবে সাংগঠনিক জোরেই অমিত শাহ সেটাও স্মরণ করাতে ভোলেননি। তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতার দলবদল নিয়ে জল্পনায় না ঢুকে নাম না উল্লেখ করে দলকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী-বিজেপিতে আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই। গোটা দুয়েক সাংগঠনিক বিষয়ে নিদান ব্যতিরিকে অমিত শাহ-র প্রাক্ নির্বাচনী বাংলা সফর কার্যত নিষ্ফলা।

Advertisement

অমিত শাহ-র সম্প্রতি বাংলা সফর কার্যত নিষ্ফলা। নতুন কোনও দিশা বা চমক কিছুই নেই তাঁর দু-দিনের সফরে। আদিবাসী ও মতুয়া পরিবারে ভোজ আর ‘শোভন-বৈশাখী’ জুটির সঙ্গে অলস সময়ে কথা বলা ছাড়া দলকে চাঙা করার মত তেমন কোনও বার্তা নেই। তবে রাজ্যের আম জনতা নয়, তৃণমূল কংগ্রেস বা কংগ্রেসও নয় অমিত শাহ সিপিএমের দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। আলিমুদ্দিন কর্তারা এতে কতটা পুলকিত হলেন বা গোঁসা হলেন সেটা জানা না গেলেও এই রাজ্যে বিজেপির শক্তির উৎস যে সিপিএম সে কথা কোনও রাখঢাক না করেই অমিত শাহ বলে গেলেন।‘কমরেড’রাই যে ‘রামরেড’ বা রাম ব্রিগেডকে জোরদার করেছেন বা আগামি দিনেও করবেন পরোক্ষে‘ অমিতজি সেই তত্ত্বেই শিলমোহর দিয়ে গেলেন। স্পষ্টতই রাজ্য বিজেপিকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রাণ ভোমরা সিপিএমেই, তৃণমূলে নয়।
নিজের দলের সাংগঠনিক শক্তি নেই। নেই রাজ্যের ৬০ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার ক্ষ‌মতা। এইসব রিপোর্ট সঙ্গে নিয়েই রাজ্য সফরে এসেছিলেন অমিত শাহ। শুধুমাত্র রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে কতজন বিধায়ক বেরিয়ে এসে দলে যোগ দেবেন এই ভরসায় ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা দখলের স্বপ্ন দেখছে রাজ্য বিজেপি। শাসকদলের ভিতরের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক সমস্যাই হল রাজ্য বিজেপির অন্যতম ভরসা। দলের এই অবস্থান যে সঠিক না তা অমিত শাহ ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দিয়েছেন। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙানোর এই ভরসা থেকে দলকে বেরিয়ে আসার জন্য অমিত শাহ কার্যত সর্তকও করেছেন। বরং তিনি সিপিএম থেকে যাঁরা আসছেন তাঁদের বা যাঁরা আসতে চান তাঁদের দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন। পরিষ্কার করে বললে দাঁড়ায়- বিশেষ খাতির করতে বলেছেন। কারণ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন জল্পনা যাই থাক তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মত হেভিওয়েট কোনও নেতা বিজেপিতে আসছেন না। দু-চারটি তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাঁরা পেনিকগ্রস্ত হয়ে জয় নিশ্চিত করতে বিজেপিতে গেলেও তাঁদের অনুগামীরা কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসেই থেকে যাবেন। ‘সংঘ ঘরানার বিজেপি’ ও ‘তৎকাল বিজেপি’-র যে বিশাল দ্বন্দ্ব-এ রাজ্য বিজেপি জর্জরিত সেদিকে নজর দেওয়ার জন্যই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। সফর যে জমল না তা বোঝাই যায় ‘শোভন-বৈশাখী’ যাঁদের কোনও জনভিত্তি নেই এমন দুইজন ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট করতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে।
এই প্রেক্ষা্পটে দাঁড়িয়ে কোনও রাজ্যে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে বিজেপির ক্ষ‌মতা দখল খোওয়াব দেখার সামিল। পাশাপাশি ‘কংগ্রেস-বাম জোট’ তাদের অবস্থা আরও সংগীন। জোটের কর্মসূচি, পরিচালন নীতি নির্ধারণ কি হবে এই সব অনেক বড় সওয়ালের সমাধান না করেই কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের পক্ষ‌ থেকে অধীর চৌধুরীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে আলিমুদ্দিন কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই। এ নিয়ে বামেদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও বেচারা শরিক দলগুলি এতটাই গুরুত্বহীন রাজ্য রাজনীতিতে যে তাদের ক্ষোথভ-বিক্ষো ভে সিপিএম আগেও ধার ধারত না, এখন তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে সিপিএম জোটের শরিক হিসেবে যে মুখ্যমন্ত্রী পদ তাদেরই হক এমন হাবভাব মনে মনে থাকলেও প্রকাশ্যে মুখ খোলার মত সাহস আর নেই। আর এই কারণে বিধানসভার আসন ভাগাভাগির ক্ষেুত্রেও কংগ্রেস যে তাঁর তলানি সংগঠনটুকু যেখানে রয়েছে সেই আসন বামেদের ছাড়বে না মুখ্যমন্ত্রীর পদে অধীর চৌধুরীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে সেই বার্তাই বামেদের আগাম জানিয়ে দিয়েছে। এই জোটের ক্ষ‌মতা দখল নিয়ে আম জনতার কোনও চিন্তা নেই। রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় বাম-কংগ্রেস তাদের ভোটের হার গত লোকসভায় যা ছিল তা ধরে রাখতে সক্ষ‌ম হবে কি?- এই নিয়েই। সেক্ষেছত্রে কংগ্রেস কয়েকটি আসন পেলেও বামেদের দিকে আদৌ কোনও আসন আসবে কিনা এই নিয়ে সীমিত পরিসরে জল্পনা রয়েছে। তবে এই ‘জোট’ বা ‘মহাজোট’ যদি প্রচারে, নির্বাচনের ময়দানে উপস্থিত থেকে লড়াই করতে পারে তবে বিজেপি নেতা অমিত শাহ যে সিপিএম থেকে দলে আসার ব্যাপারে যে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা কিছুটা হলেও ভোঁতা হয়ে যেতে পারে। অমিত শাহ-দের কাছে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট রয়েছে যে বামেদের মধ্যে একটা প্রচার(‘২০২১ বিজেপিকে, ২০২৬ আমাদের’)-এর সূত্র ধরেই বামেদের অবশিষ্ট ভোট রাম-এর অনুকূলে আনতে হবে। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিম, তন্ময় ভট্টাচার্যদের অনুগামী বামেরা যে বিজেপিকে উজার করে ভোট দেবেন এমন ইংগিত মেলার পরই অমিত শাহ বঙ্গ সফরে এসে সিপিএমের দিকে বিশেষ নজর দিতে বলে গেলেন।
প্রসঙ্গত, বিজেপি একসময় তৃণমূলের ১০০ জন বিধায়ক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এই প্রচার দিয়ে শুরু করে তা ক্রমে ৬৪ পরে ৪৬ এখন নেমে ৩৬-এ এসে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে যদি বিজেপির হিসেবে ৩৬ জন তৃণমূল বিধায়ক শেষ মুহুর্তে বিজেপিতে যোগও দেন তাহলে ওই বিধায়কদের সঙ্গে কিন্তু তৃণমূলের দুই দশকের পরীক্ষিবত ভোটাররাও চলে যাবেন এমনটা মনে করছেন না। এটা মনে করছেন না খোদ অমিত শাহও। তিনি তাই শাসক দলের বিধায়কদের দিকে না তাকিয়ে সিপিএমের ভোটারদের দিকে তাকানোর নিদান দিয়ে গেলেন। তাতে যদি কয়েকটা আসন বাড়তি দলের ঝুলিতে আসে। রাজ্য বিজেপির প্রাণসুধা যে তৃণমূলে নেই তা রয়েছে সিপিএমের অভ্যন্তরে এটা দিলীপ ঘোষদের আগাম জানিয়ে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের ‘কুমীর ছানা’- ‘শোভন-বৈশাখী’- দিয়ে ভোট হবে না সূত্রের খবর ঘনিষ্টমহলে দিলীপ ঘোষেরা অনেক আগেই আলোচনা করেছেন। তবুও অনুরোধে দলে সব পক্ষেদর মন রাখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘শোভন-বৈশাখী’কে কি দিয়ে আশ্বস্ত করেছেন তা ওঁরাই জানেন। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে ‘শোভন-বৈশাখী’ জুটি যে আলোচ্য বিষয় নয় এটা জেনেই অমিত শাহ-তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন- এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দু’দিনের এই সফরে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে যে কেন্দ্র কোনও চিন্তা-ভাবনা করছে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত শাহ। বরং রাষ্ট্রপতি শাসনে ভোট নয় নিজের সাংগঠনিক শক্তিতে ভোটে লড়ো-রাজ্য বিজেপিকে এই বার্তাটি ঘুরিয়ে দিয়ে গেলেন। আর বুথস্তরে কমিটি গঠন করতে সিপিএমের কর্মীদের চার দশকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্যই সিপিএমের কর্মীদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার নিদান দিয়ে দিল্লি ফিরে গেলেন বিজেপি নেতা অমিত শাহ।

Developed by