এইকাল নিউজ:
খুন হওয়া বিজেপির কর্মী সৈকত ভাওয়াল
হালিশহরে বিজেপি বুথ সভাপতি সৈকত ভাওয়াল খুনের 24 ঘণ্টার মধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করল বীজপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে কেলে সুমন, সুদীপ্ত ঘোষ ওরফে রাইডার বাবাই ও সুমন সাহা ওরফে লাচার। অভিযোগ, ধৃতরা সকলেই শাসকদল আশ্রিত। খুন হওয়া সৈকত হালিশহর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী ছিল।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 302, 307, 120বি, ও 325 ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। রবিবারই ধৃতদের ব্যারাকপুর আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর ধৃতদের 14 দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বীজপুর তথা পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত বলে মন্তব্য করলেন বিজেপি নেতা তথা বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি শুধু বীজপুরেই নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে। বীজপুরে গুন্ডা-মাফিয়াদের নিরাপত্তা দিয়ে মিছিলের অনুমতি দেয় পুলিশ। তাহলে মানুষ আর কী আশা করবেন! এই বীজপুরে সুরক্ষিত নেই কেউ। সৈকত ভাওয়ালকে যেভাবে খুন করা হল, যেভাবে তৃণমূলের হামলায় বিজেপি কর্মীরা জখম হলেষ, তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।’
বিজপুরের বিধায়ক আরও বলেন, ‘মানুষ আসন্ন নির্বাচনে এর জবাব দেবেন। যেভাবে মায়ের কোল খালি হয়েছে, অপরাধীদের ছেড়ে দেবেন না মানুষ। আমরা সৈকত ভাওয়ালের পরিবারের পাশে আছি সর্বদা।’ তাঁর অভিযোগ, ‘এই সবই সংঘটিত হচ্ছে শাসক দলের অঙ্গুলিহেলনে। মানুষ সব দেখছেন, বুঝতেও পারছেন। এর জবাব মানুষ ভোট বাক্সেই দেবেন। কিন্তু বীজপুর তথা পশ্চিমবঙ্গে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত।’
উল্লেখ্য, শনিবার বিজেপির ‘গৃহ সম্পর্ক’ যাত্রায় লাঠি, বাঁশ, রড নিয়ে তৃণমূলের দষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ওই হামলায় মৃত্যু হয়েছে বুথ সভাপতি সৈকত ভাওয়ালের। এর পাশাপাশি গুরুতর জখম হয়েছেন বিজেপির আরও বেশ কয়েকজন কর্মী। তাঁদের মধ্যে ছ’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিজপুর থানায় বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনে বিজেপি নেতৃত্ব।
ইতিমধ্যেই হালিশহরে বিজেপি নেতা খুন নিয়ে তুলকালাম পরিস্থিতি রাজ্যজুড়ে । উত্তরবঙ্গে বিজেপি কর্মী খুন, জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার পর এবার হালিশহরের এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন বিজেপি নেতারা। এমন এক পরিস্থিতিতে কর্মী খুন নিয়ে দিলীপ ঘোষ থেকে মুকুল রায়, শুভ্রাংশুরা সরব হতে শুরু করেছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। বীজপুর তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুবোধ অধিকারী । তিনি বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। যতদূর শুনেছি, এটা ওদের নিজেদের দ্বন্দ্ব। আমরাও চাই যে দুষ্কৃতীরা এই খুন করেছে, তাদের অবিলম্বে শাস্তি হোক। আমরা মৃত বিজেপি কর্মীর পরিবারের পাশে রয়েছি।’ নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘দুঃখজনক ঘটনা। তবে এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। শুনেছি, মৃতের সঙ্গে হামলাকারীদের পুরোনো শত্রুতা ছিল।’
রবিবার বিজেপি নেতা মুকুল রায় টুইট বার্তায় জানান, ‘আরএসএস এর একনিষ্ঠ কার্যকর্তা ও বিজেপির নেতা সৈকত ভাওয়ালের মৃত্যুর নেপথ্যে তৃণমূলি ত্রাসের চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে।’ বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, ‘এই মৃতদেহ শুধু একটি মানুষের মৃতদেহ নয়, এই রাজ্যের ঘুণ ধরা গণতন্ত্রের লাশ।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘আর কত মায়ের কোল খালি হলে তৃপ্ত হবে তৃণমুল! আর কত পরিবারের হাহাকারে বিদীর্ণ হবে আকাশ! মানুষ সহ্য করবে না।’ তৃণমূলকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘যাঁদের কোল খালি হল, তাঁরা ছেড়ে দেবে না। বদলা হবে।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘সৈকত ভাওয়ালকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে।রোজই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। গতকাল কসবায় পথসভা ছিল। আমাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। একাধিক জায়গায় এরকম ছোটখাটো ঘটনা ঘটেই চলেছে। টিএমসি গুন্ডা, পুলিশ ছাড়া আর কোনও ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। পুলিশের যেভাবে অপব্যবহার হচ্ছে, তাতে পুলিশ ফোর্সের বদনাম হয়ে যাচ্ছে।’