তৃণমূল কংগ্রেসের সামনে দলে ভাঙন যে খুব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এমনটা নয়। এলাকাগত কোনও হেভিওয়েট নেতা কেউ দল ছেড়ে বিজেপিতে গেলে তাঁর সঙ্গে সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচকমণ্ডলী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে বিশাল সংখ্যায় লাইন দেবেন এমনটা বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু নয়। বরং বহু এলাকায় দলের ভাঙনের আশংকায় নীচুতলার যে সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক দলে কোনও সময় গুরুত্ব পাননি তাঁরাই ফের জোটবদ্ধ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
এই রকম পরিস্থিতির মাঝে একটা জোর সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে তা হল দলের মধ্যে থেকে বিরোধীদের খবরাখবর পাচার করা ও শেষ মুহুর্তে অন্তর্ঘাত করে দলকে বিপদে ফেলা। যাঁরা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মনে রাখবেন তাঁরা কিন্তু তাঁদের বিশ্বস্ত কর্মী ও সমর্থকদের একাংশকে রেখে যাচ্ছেন এই কাজটি করার জন্য। যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের হয়ে এলাকাগত অপারেশনের দায়িত্ব রয়েছে সংঘ পরিবারের উপর। বিজেপি এইসব তৎকাল দলে যোগ দেওয়া নেতা, কর্মী, সমর্থকদের পরিচালনা করার জন্য পৃথক ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে কাজ চালাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই রিপোর্ট বিজেপির দপ্তর হয়ে চলে যাচ্ছে আর.এস.এস-এর কাছে। সংঘের কর্মীরা সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ নজরদারি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। আর শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙার চেয়ে ওই দলে নিজের বিশ্বস্ত ‘কোর টিম’ সমস্ত এলাকায় রেখে কাজ চালানোকে বিজেপি ও সংঘ পরিবার বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সামনে দলে ভাঙন যে খুব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে এমনটা নয়। এলাকাগত কোনও হেভিওয়েট নেতা কেউ দল ছেড়ে বিজেপিতে গেলে তাঁর সঙ্গে সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেসের অনুগামী নির্বাচকমণ্ডলী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে বিশাল সংখ্যায় লাইন দেবেন এমনটা বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু নয়। বরং বহু এলাকায় দলের ভাঙনের আশংকায় নীচুতলার যে সমস্ত তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক দলে কোনও সময় গুরুত্ব পাননি তাঁরাই ফের জোটবদ্ধ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
এই রকম পরিস্থিতির মাঝে একটা জোর সংশয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে তা হল দলের মধ্যে থেকে বিরোধীদের খবরাখবর পাচার করা ও শেষ মুহুর্তে অন্তর্ঘাত করে দলকে বিপদে ফেলা। যাঁরা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মনে রাখবেন তাঁরা কিন্তু তাঁদের বিশ্বস্ত কর্মী ও সমর্থকদের একাংশকে রেখে যাচ্ছেন এই কাজটি করার জন্য। যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের হয়ে এলাকাগত অপারেশনের দায়িত্ব রয়েছে সংঘ পরিবারের উপর। বিজেপি এইসব তৎকাল দলে যোগ দেওয়া নেতা, কর্মী, সমর্থকদের পরিচালনা করার জন্য পৃথক ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে কাজ চালাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই রিপোর্ট বিজেপির দপ্তর হয়ে চলে যাচ্ছে আর.এস.এস-এর কাছে। সংঘের কর্মীরা সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষ নজরদারি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে। আর শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে ভাঙার চেয়ে ওই দলে নিজের বিশ্বস্ত ‘কোর টিম’ সমস্ত এলাকায় রেখে কাজ চালানোকে বিজেপি ও সংঘ পরিবার বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে আসা কর্মীদের থেকে সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কর্মীদের সংঘ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ তাঁদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক গড়ে কাজের যে অভিজ্ঞতা ও ‘রেজিমেন্টেড নির্বাচনী পার্টি’ হিসেবে যে ভোট কুশলী মনোভাব তাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চায় সংঘ পরিবার। তাই বেছে বেছে সিপিএম থেকে যোগ দেওয়া কর্মী ও নেতার এখন কদর বেশি বিজেপি-তে। ১০০ জন তৃণমূল ছেড়ে আসা বিজেপি কর্মী থেকে সংঘ পরিবার একজন সিপিএম ছেড়ে আসা কর্মীকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তার অন্য একটি কারণ রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে যাতে প্রচার জোর দানা না বাঁধে সেই দিকেও সংঘের নজর রয়েছে। সংঘের মূল্যায়নে যদি বাম-কংগ্রেস জোটের ফলে নীচুতলায় বামের ভোট রাম-এর শিবিরে যাওয়ার যে ঢল ২০১৯ ছিল তা প্রতিহত হলে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে কোনও মতেই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলা সম্ভব হবে না। বাম-দের যে ‘তলানি ভোট’ সেদিকে নজর রেখেই পা ফেলছে বিজেপি ও সংঘ পরিবার।
এদিকে শাসক দল ও রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক দুটি কর্মসূচিকে ঘিরে নীচুতলায় পজিটিভ প্রতিফলনও চোখে পড়েছে। একটি ‘দুয়ারে সরকার’ ও অপরটি ‘বঙ্গধ্বনি’। মানুষের ঢল নেমেছে শহর ছাপিয়ে রাজ্যের গ্রাম বাংলায়। রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি ও তার সাফল্য নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে তার সুফল পাবেনই।
সরকারে এক দশক থাকার ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট যে একেবারে নেই তা নয়। সেটা কাটিয়ে উঠতে মানুষের মধ্যে এমনকী দলের কর্মী, সমর্থকদের মধ্যেও যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে প্রয়োজন বহু ক্ষেত্রে জেলাস্তর থেকে ব্লক এমনকী বুথস্তরে নেতৃত্বের পরিবর্তন। এই ক্ষে্ত্রে যে সর্ষের মধ্যে ভুত সেই সর্ষেকেই যদি ব্যবহার করা হয় তাহলে সমস্যা কিন্তু থেকেই যাবে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে কিছু এলাকায় মানুষের মধ্যে এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সঙ্গত ক্ষোঘভ রয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তাঁদেরকে নেতৃত্ব থেকে না সরালে হাজারো সাফল্য রাজ্য সরকারের থাকা সত্ত্বেও ই.ভি.এম-এ তার যথাযথ প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে।
পাশাপাশি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষোত্রেও দলকে অনেক বেশি সর্তক পদক্ষে্প ফেলতে হবে। বেশ কিছু বিধায়কের ভূমিকা ও ব্যবহার নিয়ে রয়েছে স্থানীয় নেতৃত্বের ক্ষোভ। তাছাড়া কিছু বিধায়ক যাঁদের নিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ান সেটাই পছন্দ করেন না মানুষেরা। সেই সব চক্র সুকৌশলে না ভাঙতে পারলে আখেরে দলের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এই সব বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। প্রয়োজনে কিছু প্রার্থী বদল ঘটানো বিশেষ প্রয়োজন। এলাকায় সেই সব বিধায়ক ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। এই বিষয়গুলি অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। গত দশ বছরে বেশ কিছু এলাকায় এইসব মুখগুলি মানুষের কাছে এমনকী দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের সাংগঠনিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি প্রার্থী মনোনয়নে যদি সিদ্ধান্তে ফের একি ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে বিধানসভা নির্বাচনে তার কঠিন মাসুল দিতে হবে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে।
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৯৯৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যে সমস্ত কর্মীরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করতেন তাঁদের সক্রিয় করে দ্রুত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুরুত্ব সহ নামানো বিশেষ জরুরি। বিশেষ করে অভিমানে যাঁরা চুপ করে বসে রয়েছেন বা নিতান্ত পরিস্থিতিগত কারণে কংগ্রেস বা বামেদের দলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদেরকে সক্রিয় করা ও দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। এই কাজ যত বেশি এলাকায় শাসক তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব করতে সক্ষম হবে ততই দলের পক্ষো মঙ্গল হবে। নতুবা হাজার একটা সাফল্যের পালক নিয়েও সাংগঠনিক নানা সমস্যাই তৃণমূল কংগ্রেসের বড় বিপদের কারণ হয়ে সমস্যা বাড়াতে পারে। যার ফলে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে বড় ধরনের বেগের মুখে পড়তে হবে।