
এইকাল নিউজ: পার্ক সার্কাস ময়দানে বৈচিত্র্যের মাঝে মহামিলন উৎসবের সূচনা হল ১ ফেব্রুয়ারি, সোমবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের উদ্যোগে ৫ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ‘মিলন উৎসব ২০২১’।
পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান দক্ষ আধিকারিক ডা. পিবি সেলিম (আইএএস)-এর নেতৃত্বে এই মিলন উৎসবে বিগত বছরগুলোর মতোই এবছরও আবেগ-আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শামিল হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সর্ব শ্রেণির মানুষের কল্যাণে এই উৎসবের সার্বিক পরিকল্পনা ও সার্থক আয়োজন দেখে মুগ্ধ সবাই। মিলন উৎসব বাংলার মননের আকাশে ইতিপূর্বেই বিশেষ দাগ কেটেছে। এবছরও তা ঘরে ঘরে ঐক্য আর সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছনোর ডাক দিল।

সোমবার মিলন উৎসব ২০২১-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিন মূল মঞ্চে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ডা. পিবি সেলিম (আই.এ.এস.)-এর হাত দিয়ে শুভ উদ্বোধন হল ‘উদার আকাশ’ ২০ বর্ষ ১ম বর্ষ বিশেষ মিলন উৎসব সংখ্যা ২০২১-এ্য। উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি নিগম চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জেনারেল ম্যানেজার শামসুর রহমান। এদিন উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত শবনম সালেহা রচিত ‘বিশ্বনবী মুহাম্মদ স’ এবং সেখ আবদুর রহমান রচিত ‘ইসলাম কী বলে’ গ্রন্থ দুটিরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডা. সেলিম। মঞ্চে স্কলারশিপ, ঋণ, প্রভৃতি প্রদান করা হয়।
এবছর মিলন উৎসবের থিম ‘ঐকতান’। গতবছর ছিল ‘আমাদের সংবিধান আমাদের শক্তি’। বাংলার অন্যতম দক্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক সেলিম সাহেবের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গত বছরের মতো এবছরেও মিলন উৎসব-এর বিশেষ আকর্ষণে আছে কেরিয়ার স্টল, মেডিক্যাল প্যাভিলিয়নে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, ফুড স্টল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, জব মেলা, হস্তশিল্পের স্টল, কিডস জোন, শিক্ষা সচেতনতার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল, চাকরি জন্য কেরিয়ার কাউন্সেলিং, বাংলার বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব হস্তশিল্প প্রভৃতি। এছাড়াও প্রতিদিন থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ২০০–র বেশি স্টল রয়েছে।

উৎসবের উদ্বোধনে প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী ও কলকাতার মুখ্য পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজ্যের আরও দুই মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান ও গিয়াস উদ্দিন মোল্লা। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ নাদিমুল হক ও প্রাক্তন সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান। আরও উপস্থিত ছিলেন সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব গোলাম আলি আনসারি (আইএএস), ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিধায়ক আবদুল গনি, বিধায়ক খালেক মোল্লা, ক্বারি ফজলুর রহমান ও মওলানা শফিক কাসেমি।

পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের জেনারেল ম্যানেজার শামসুর রহমান ও মোহাম্মদ নকি-সহ বিত্ত নিগমের অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মচারীও এই মহা আয়োজন সফল করতে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
মেডিক্যাল প্যাভিলিয়নে পরিষেবা দান করছে উদার আকাশ, ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ, আই কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, কার্ডিওলজিস্ট নারায়ণ হেল্থ, ইউনিসেফ, ট্রাইবেকা কেয়ার প্রভৃতি সংস্থা।
খ্রিস্টান, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি সম্প্রদায়ের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিভিন্ন দিনে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান করছেন।
উল্লেখ করা যায়, গত বছর এই মেলায় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুলুক সন্ধান দেওয়া স্টলগুলিতে। বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল মেডিক্যাল শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলিও।
এবারও পাঁচদিনের এই মেলায় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের সুবিধাভোগীদের তৈরি নানা ধরনের অলঙ্কার, পোশাক ও পিঠে-পুলি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন স্টলে। বক্তব্য রাখছেন বিশিষ্টজনেরা।
অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তাদের তালিকায় রয়েছেন আল আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম,কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য ও ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের চিকিৎসা বিজ্ঞান শাখার সভাপতি বিজ্ঞানী ড. গৌতম পাল প্রমুখ।
আয়োজক সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান ও সিএমডি দফতরের প্রধান সচিব ডা. সেলিম জানালেন, ‘নিগমের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ও মেয়াদি ঋণ নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করে স্বনির্ভর হয়েছেন, তাঁরা এখানে পণ্য সম্ভার সাজিয়ে তুলছেন। মেলার মূল লক্ষ্য এই সব প্রান্তিক মানুষের সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরা এবং তার বিপণনের ব্যবস্থা করা। এবছরও কোভিড বিধি মেনেই জনসমাগম হচ্ছে এবং প্রথম দিন থেকেই ক্রেতারা যেভাবে আসছেন, তা আমাদের উৎসাহিত করছে।’
উদার আকাশ পত্রিকা ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে মিলন উৎসবে মেডিকেল প্যাভিলিয়নে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার শিবিরে থাকবেন বিভিন্ন বিষয়ের নামী চিকিৎসকরা।
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব কুটির শিল্প, খাবারদাবার এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটছে এই মিলন উৎসবে।
মিলন উৎসব সার্থক করতে সকলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, ডাঃ পি. বি. সেলিম, আই.এ.এস., চেয়ারম্যান, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। মৃগাঙ্ক বিশ্বাস, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম।
মিলন উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ফ্রি কেরিয়ার কাউন্সেলিং এবং
বেকারদের চাকরি সংক্রান্ত সুপরামর্শ।
মিলন উৎসবের সমস্ত আয়োজন ও প্রস্তুতির মূল কান্ডারী ডাঃ পি. বি. সেলিম আরও জানান, বিশেষ আকর্ষণে থাকছে জব মেলা, হস্তশিল্প, কেরিয়ার স্টল, চাকরি-সংক্রান্ত কাউন্সিলিং, থিম প্যাভিলিয়ান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, কিড জোন, ফুড জোন প্রভৃতি। উৎসব চলবে প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত।