এইকাল নিউজ :
প্রার্থী হচ্ছেন মুকুল রায়? একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজয় করতে গেরুয়া শিবিরের হয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন তিনি? তুঙ্গে জল্পনা। রাজনৈতিক মহলের খবর, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে নাকি মুকুল রায়ের দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। দল তাঁকে পরবর্তী দফায় প্রার্থী করতে পারে, পরবর্তী তালিকায় প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করতে পারে। যদিও বিজেপির তরফে এই বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পড়েনি। তবে নদিয়ার কৃষ্ণমগর উত্তর কেন্দ্রে পদ্মফুল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মুকুল রায়, এমন খবর এখন বিজেপির অন্দরেও।
একটু ফ্ল্যাশব্যাকে চোখ রাখা যাক। 2004-এর লোকসভা ও 2006-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্ব বর্তায় মুকুল রায়ের কাঁধে। আর দায়িত্ব পেয়েই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। যার ফলে 2008-এর পঞ্চায়েত ভোটে মেলে অভূতপূর্ব সাফল্য। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ 24 পরগনার দু’টি জেলা পরিষদ দখল-সহ দক্ষিণবঙ্গের বহু গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে নজর কাড়ে তৃণমূলের সাফল্য। যা আরও ত্বরান্বিত হয় 2009-এর লোকসভা নির্বাচনে। ব্যারাকপুর, তমলুক-সহ রাজ্যের সিংহভাগ লালদুর্গ তছনছ হয়ে যায় পরিবর্তনের ঝড়ে। 2010-এর পুরভোটেও ঘাসফুলের জয়জয়কার। বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় 2011-য় বাংলা দখলের মধ্যে দিয়ে। দলে মমতার পরই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন কাঁচরাপাড়া ঘটক রোডের রায় পরিবারের গৃহকর্তা। এরপর 2013-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেও চোখধাঁধানো নিরঙ্কুশ সাফল্য পায় তৃণমূল। ইতিমধ্যেই মুকুল রায়ের কলকাঠিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মযজ্ঞে অনুপ্রাণিত হয়ে ঘাস ফুল শিবিরে ভিড়তে থাকেন একের পর এক বাম বিধায়ক, কাউন্সিলররা। ফলে একের পর এক পুরসভার দখল যেতে থাকে তৃণমূলের হাতে। কিন্তু তাল কাটে 2014-র লোকসভা নির্বাচনের আগে। অভিমানে কিছুদিন দূরে সরে থাকলেও ‘দিদির ডাকে’ 2016-র ভোট বৈতরণী পার করতে মাঠে নামেন মুকুল। সারদা-নারদার মতো বিতর্কের মাঝেও আসে সাফল্য। কিন্তু ফের দলনেত্রীর সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব। যার চূড়ান্ত পরিণতি, 2017 সালে মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদান। মুকুল রায়ের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে 2018-র পঞ্চায়েত ভোটে বাংলায় আশাতীত ফল করে বিজেপি। আর এরপরই মুকুল রায়ের হাত ধরে মোদির উন্নয়নের অনুপ্রেরণায় ঘাসফুল শিবিরের একের পর এক বিধায়ক, সাংসদরা নাম লেখাতে শুরু করেন বিজেপিতে। 2019-এর লোকসভা নির্বাচনে মুকুল রায়ের সাংগঠনিক দক্ষতায় ভর করেই দুই থেকে আঠারোয় পৌঁছে যায় বিজেপি। বলা বাহুল্য বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হন তৃণমূল ছেড়ে আসা সৌমিত্র খাঁ, নিশীথ প্রামাণিক, খগেন মুর্মুরা। মতুয়া সম্প্রদায়ের মন কাড়তে বনগাঁয় লোকসভার প্রার্থী পদে শান্তনু ঠাকুরকে বেছেও বাজিমাত করেন মুকুলই। তৃণমূল ভেঙে পুরপ্রধান, কাউন্সিলর, বিধায়কদের ঢল নামে বিজেপিতে। আর এই দলবদলের কারিগর সেই মুকুল রায়।
মুকুল রায় শেষবার বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন ২০০১ সালে। সেই সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছিল তৃণমূলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জগদ্দল আসনে প্রার্থী করেছিলেন। তার পর থেকে তিনি আর কখনও বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে প্রার্থী হননি। বরং তিনি ভোট করাতেই স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিয়মকানুন প্রায় গুলে খেয়েছেন মুকুলবাবু। বাংলার প্রতিটি পঞ্চায়েত, ব্লক, জেলা ধরে ধরে মুকুলবাবু স্থানীয় রসায়ন এতটাই চেনেন যে, তাঁকে এক সময়ে তৃণমূলের অনিল বিশ্বাসও বলা হত। এখন প্রশ্ন হল, তা হলে কি চাণক্যরা ভোটে লড়েন না? জবাবে বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘কে বলেছে সে কথা! কংগ্রেসের চাণক্য বলে পরিচিত প্রণব মুখোপাধ্যায় রাজনীতির শেষ ল্যাপে পৌঁছে জঙ্গিপুর থেকে লোকসভা ভোট লড়েছিলেন এবং পর পর দুবার জিতেছিলেন। অমিত শাহও গান্ধীনগর থেকে এবার লোকসভা ভোটে জিতেছেন। সুতরাং এমন কোনও বাধাধরা নিয়ম নেই।’ বিজেপির ওই নেতার কথায়, ‘রাজনীতিতে কোনও কিছুই চিরন্তন নয়। যুদ্ধ প্রেম এবং রাজনীতিতে সবই সম্ভব।
যদিও মুকুলবাবু ভোটে লড়তে খুব আগ্রহী এমনটা নয়। তিনি নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেওছেন যে, ভোটে প্রার্থী হতে চান না। সেটাও অ্যাবসোলিউট বলে মনে করার কারণ নেই। কারণ, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সব সময়েই আলোচনার মধ্যে দিয়ে হয়। কে বলতে পারে, নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের কথায় মুকুলবাবু শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাবেন না! তবে সূত্রের মতে, অমিত শাহরা চান না রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ভোটে লড়ুন। সাধারণত কোনও রাজ্যেই দলের রাজ্য সভাপতিকে বিজেপি ভোটে প্রার্থী করে না। কিন্তু দিলীপ ঘোষ লোকসভা ভোটের প্রার্থী হয়েছিলেন। এ যুগের চাণক্য মুকুলবাবুকে বারবারই বলতে শোনা যায়, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না।
সূত্রের খবর, এবারের বিধানসভা ভোটকে মোদি-শাহরা পাখির চোখ করে এগোতে চাইছেন। অভিনব স্টাইলে ইতিমধ্যেই দেখা গেছে একগুচ্ছ সাংসদকেও বিধানসভা ভোটে লড়ার জন্য টিকিট দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। কাজেই সব কিছু ঠিক এগোলে দুই দশক পরে ভোটে লড়তে দেখা যাবে ভারতের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে। সূত্রের খবর, টিকিট দেওয়া হতে পারে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা দীনেশ ত্রিবেদী ও ব্যারাকপুরের বাহুবলি সাংসদ অর্জুন সিংকেও।
প্রসঙ্গত, বিজেপির তরফে প্রথম ৪ দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এবার বাকি ৪ দফার তালিকা ঘোষণা করার অপেক্ষা। প্রথম ৪ দফার তালিকায় যেমন দলবদলুদের প্রার্থী করেছে বিজেপি, তেমনই টিকিট পেয়েছেন তারকারাও। আবার দ্বিতীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দলের অন্দরে ক্ষোভ চরমে উঠেছে। অনেক জায়গাতেই প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে সোচ্চার হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে, গত সোমবার রাতে শেষ মুহূর্তে সূচি বদলে অসম থেকে সোজা দিল্লি না উড়ে গিয়ে ফের কলকাতায় আসেন শাহ। এরপর নিউটাউনের একটি পাঁচতারা হোটেলে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি বৈঠক বসেন তিনি। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই কীভাবে বাছাই, কেন ক্ষোভ ইত্যাদি ইস্যুতে প্রার্থীতালিকা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকে। আর এরপরেই পরবর্তী প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। আর সেখানেই প্রার্থী হিসেবে মুকুল রায়ের নাম উঠে আসে বলে রাজনৈতিক সূত্রের খবর।