এইকাল নিউজ:
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘোষিত হল বিজেপির পরবর্তী পর্যায়ের প্রার্থী তালিকা। প্রত্যাশা মতোই বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন দু’বারের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। মূলত উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই ভোট যুদ্ধে নামছেন তিনি। শিক্ষিত, ভদ্র ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি শুভ্রাংশুর বড় প্লাস পয়েন্ট, মানছেন বিরোধীরাও।
পার্শ্ববর্তী নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের দুবারের বিধায়ক এবং এবারের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের বিরুদ্ধে এবারেও বিজেপি প্রার্থী করেছে ফাল্গুনী পাত্রকে। যদিও তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পার্থ ভৌমিকের কাছে বড় ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার নৈহাটিতে বিজেপি কাকে প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিল। গণেশ দাস, রমেশ হালদার-সহ একাধিক নাম উঠে আসছিল। কিন্তু বিজেপি উচ্চ নেতৃত্ব এবারেও ফাল্গুনী পাত্রর উপরেই আস্থা রাখলেন।
ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে যথারীতি বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ব্যারাকপুরের বিজেপির সাংসদ অর্জুন পুত্র, বিদায়ী বিধায়ক পবন সিং। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভাটপাড়া বিধানসভার উপ নির্বাচনে রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রকে বিরাট ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিধানসভায় পা রাখেন পবন সিং। এবারে তাই বিজেপি প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল।
জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। যদিও এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের চর্চায় একাধিক নাম উঠে আসছিল। পার্থসারথী পাত্র ওরফে পানু, ফাল্গুনী পাত্র, সাংসদ অর্জুন সিং এর ভাইপো সৌরভ সিং, অরুণ ব্রহ্ম ইত্যাদি নাম চর্চায় এলেও এঁদের কাউকেই টিকিট দেননি বিজেপি নেতৃত্ব।
নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হলেন যথারীতি সুনীল সিং। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জগদ্দল আসনে জিতেছিলেন কং-সিপিএম জোট প্রার্থী মধুসূদন বাবু। তাঁর হঠাৎ মৃত্যুর পর এই আসনের উপ নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন সুনীল সিং। উপনির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে বড় ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের কিছুদিন পর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সুনীল সিং। বিজেপি এবার তাঁকেই জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আমডাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জয়দেব মান্না। উল্লেখ্য, এই বিধানসভা কেন্দ্রটি তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এমনকী গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে অর্জুন সিংয়ের কাছে হেরে গেলেও আমডাঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল।
ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রত্যাশা মতই বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন চন্দ্রমণি শুক্লা। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা আইনজীবী মনীশ শুক্লা দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন। এলাকার সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ঘনিষ্ঠ মনীশ শুক্লার বাবা চন্দ্রমণি শুক্লাকে বিজেপি এবারের ভোটের প্রার্থী করেছে। উলেখ্য, কিছুদিন আগেই ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এবারের ভোটে শিলভদ্র দত্ত ব্যারাকপুরের জায়গায় খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। ফলে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে টলিউদের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীকে। কাজেই একদিকে প্রয়াত মনীশ শুক্লার বাবা চন্দ্রমণি শুক্লার পক্ষে যেমন থাকবে সেন্টিমেন্টের ভোট, অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী টলিউড এর সেলিব্রিটি। তবে রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অবাঙালি অধ্যুষিত টিটাগর অনেকটাই শুক্লাজির পাশে থাকবে।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই প্রচারে রাস্তায় নেমেছেন বিজেপি প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ১২৭ কেন্দ্রে পার্থীর নাম আগেই ঘোষণা করেছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার ঘোষণা হল আরও ১৪৮ কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম। প্রত্যাশা মতোই এই দফায় হেভিওয়েটদের প্রার্থী করেছে পদ্ম শিবির। রয়েছেন সাংসদ থেকে তারকারাও। তবে এখনও ১৯টি কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা বাকি। এদিন পর্যন্ত যে ২৭৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৬জন সংখ্যালঘু, শতকরার হিসাবে যা মাত্র দুই শতাংশ।