শোভনলাল রাহা, এইকাল নিউজ:
তিনি দু’বারের বিধায়ক। পরিণত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সিপিএম কিংবা বিজেপির নেতারা, এমনকী অতিবড় রাজনৈতিক সমালোচকও স্বীকার করে নেন, সৌজন্যবোধ ও সংস্কৃতি মনস্কতায় ব্যক্তি পার্থ ভৌমিক ব্যতিক্রমী। তাই এলাকার বাম কিংবা অতিবাম মনস্ক বুদ্ধিজীবীরাও এবারের ভোটে বলতে শুরু করেছেন যেহেতু এটা বিধানসভা ভোট, তাই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে আর একই সঙ্গে সংস্কৃতির পুণ্যভূমি নৈহাতিতে শান্তির বাতাবরণ বজায় রাখতে তাঁরা নিজেদের ভোট পার্থ ভৌমিককেই দেবেন।
শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে পার্থ ভৌমিককে পাওয়া গেল ব্যতিক্রমী মেজাজে। অকপটে সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের জবাব দিলেন সোজাসাপ্টা। এদিন নৈহাটি পুরসভার সমরেশ বসু কক্ষে শুক্রবার নৈহাটি বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেন নৈহাটির এই তৃণমূল প্রার্থী। সঙ্গে ছিলেন পার্শ্ববর্তী বীজপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুবোধ অধিকারী ও নৈহাটি টাউন শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অশোক চট্টোপাধ্যায়। সেখানেই একের পর এক তোপ দাগেন বিজেপির বিরুদ্ধে।বাংলায় বেকারত্ব বেড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীদের। এবারের বিধানসভা ভোটে তাঁরা স্লোগান তুলেছেন, ভাতা নয়, চাকরি চাই। বিরোধীদের এই অভিযোগ মেনে নিয়ে কার্যত মোদি সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান তিনি। পার্থ ভৌমিক বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত বেকারত্ব বাড়বে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘নরেন্দ্র মোদির আমলেই দেশে সব থেকে বেকারত্ব বেড়েছে। একের পর এক সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ হয়েছে। সারা দেশের মতো বাংলাতেও তার প্রভাব পড়েছে। তাই মোদি যতদিন দেশের ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন বেকারত্ব ঘুচবে না। ২০২৪ সালে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বেকারত্ব বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু নৈহাটির মানুষ নয়, সমগ্র বাংলার মানুষের কাছে আবেদন, ২০২৪ সালে মোদিকে ক্ষমতাচ্যূত করে বেকারত্বের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করুন।’
পার্থ ভৌমিকের কটাক্ষ, ‘বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প কোনও মুখই খুঁজে পাচ্ছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই এদিক-ওদিক থেকে ২০জনকে প্রার্থী করেছে। মোদিজি মুখে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলছেন। অথচ সেই ইঞ্জিনের চালক কে হবেন, তা এখনও স্থির করতে পারেননি। বিজেপির ইঞ্জিনের কোনও চালক নেই। আর আমি বলছি, যে ইঞ্জিনের চালক থাকে না, সেই ইঞ্জিনের দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী।’
নৈহাটির গত দু-বারের বিধায়ক তিনি। ২০১১ সালে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী তথা নৈহাটির তিনবারের সিপিএম বিধায়ক রঞ্জিত কুণ্ডুকে হারিয়ে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির নাট্যকর্মী পার্থ ভৌমিক। সেসময় স্লোগান উঠেছিল, মন্ত্রীমশাই ব্যর্থ, তাইতো এবার পার্থ। গত ১০ বছরে সিপিএম জমানার সেই ব্যর্থতার কতখানি ঘাটতি পূরণ করে এলাকার উন্নয়ন করতে পেরেছেন, আগামী দিনেই বা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে কী কী বিষয় গুরুত্ব পাবে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এদিন আলোচনা করলেন সেসব নিয়ে। জানালেন, ইতিমধ্যেই বেহাল দশা কাটিয়ে নৈহাটি রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল সুষ্ঠু পরিষেবায় নজির গড়েছে। হাসপাতালে বসেছে ৬টি ভেন্টিলেটরও। যা কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া পার্শ্ববর্তী আর কোনও হাসপাতালে নেই। এবার জিতে সেই নৈহাটি হাসপাতালের আরও আধুনীকিরণে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার
দিতে চান। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, যাতে এলাকাবাসীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে না হয়। বললেন তাঁর আমলে তৈরি হওয়া আন্তর্জাতিক মানের নৈহাটি স্টেডিয়াম, নৈহাটি বাস টার্মিনাস, নৈহাটি-অশোকনগর জল প্রকল্প থেকে শুরু করে রাস্তা, আলো-সহ সার্বিক উন্নয়নের কথা।
তাঁর বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী লড়াকু নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র। সিপিএম প্রার্থী রঞ্জিত কুণ্ডুর মেয়ে ইন্দ্রাণী কুণ্ডু মুখার্জি। দু-জনকেই নিজের বোন সম্বোধন করে পার্থ বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনও লড়াই নেই। আমি ব্যক্তিগত লড়াইয়ে বিশ্বাস করি না। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করছি। বিপক্ষে রয়েছে দুটো দল। আমার লড়াই নীতি-আদর্শের লড়াই।’ বললেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষের দরবারে গিয়ে ভোট চাইছি। জেতাবেন কিনা, তা মানুষই ঠিক করবেন।’