Breaking
11 Apr 2025, Fri

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে নৈহাটির বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রে তিনদিন ব্যাপী বঙ্কিম জন্মজয়ন্তী

শোভনলাল রাহা,এইকাল নিউজ:

২৬ জুন থেকে তিনদিন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৮৩ তম জন্মোৎসব পালিত হচ্ছে নৈহাটির বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রে। বঙ্কিমচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি ও জন্মস্থানে মাল্যদান এবং পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণ দেন বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ড.রতনকুমার নন্দী। বন্দেমাতরম সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীতজ্ঞ রাজা চট্টোপাধ্যায়।
উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, নৈহাটির মুখ্য পুরপ্রশাসক অশোক চট্টোপাধ্যায়, উত্তর ২৪ পরগনার ডিআইসিও দেবাশিস দত্ত, ব্যারাকপুরের এসডিআইসিও প্রদীপ্ত আচার্য-সহ বহু বিশিষ্টজন।

Advertisement


নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক জানালেন, প্রতি বছর নৈহাটির মানুষ বঙ্কিম জন্মজয়ন্তী পালন করতেন বাংলার তারিখ ১৩ আষাঢ়। কিন্তু দেশ জুড়ে সাহিত্য সম্রাটের ইংরাজি জন্মতারিখ ২৬ জুন জন্মজয়ন্তী পালিত হয়। একথা জানতে পেরেই উদ্যোগ নেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ২৬ জুন থেকে ২৮ জুন, তিনদিন ব্যাপী বঙ্কিমের জন্মজয়ন্তী পালিত হচ্ছে নৈহাটির বঙ্কিম ভবনে।
বঙ্কিম-ভবনের অধ্যক্ষ ড. রতনকুমার নন্দী বলেন, ‘তিনদিন ব্যাপী এই বঙ্কিম জন্মজয়ন্তীর আয়োজক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্র, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ও নৈহাটি পুরসভা।’ অধ্যক্ষ আরও জানান, কোভিড বিধি মেনেই পালিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান।


ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের সংগ্রহশালা দেখে আমি অভিভূত। এখানে বহু ঐতিহাসিক উপাদান রয়েছে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। ব্যারাকপুরের সমস্ত ঐতিহাসিক উপাদান নিয়ে একটি বৃহৎ মিউজিয়াম যাতে গড়ে তোলা যায় আমি তার প্রস্তাব রাখব।’ ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনার তাঁর প্রস্তাব নিয়ে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর যাবৎ বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের কাজ বিশেষভাবে নজর কাড়ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র, হরপ্রসাদ, সমরেশ, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য উত্তরসূরী অধ্যক্ষ ড. রতনকুমার নন্দী।

সংগ্রহশালা ও গ্রন্থাগারের পরিবর্ধনের প্রয়োজনে পূর্বরেলের কাছ থেকে লিজবাবদ অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহশালার দক্ষিণে  ১৮০০ বর্গফুট জমির উপরে একটি তিনতলা অ্যানেক্সি ভবন নির্মিত হয়েছে। যদিও প্রথম ধাপে বেশ কিছুটা এগোনোর পর অর্থাভাবে কাজ থমকে গিয়েছিল। তবে ২০১৪ সালে দীনেশ ত্রিবেদী দ্বিতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর বিধায়ক পার্থ ভৌমিক এবং বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন পরিচালন সমিতির সদস্য অধ্যাপক (ড.) রতনকুমার নন্দী যৌথভাবে উদ্যোগ নেন। তাঁদের সেই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ২৫ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান দেন। সেই টাকা দিয়ে অ্যানেক্সি ভবনের কাজ অনেকটা এগিয়ে যায়। পরবর্তীতেত নানা কারণে সেই কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রতনবাবু বঙ্কিম ভবনের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই কাজ সম্পূর্ণ করেন।

বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে সঞ্জীবচন্দ্র সভাঘরে প্রতিবছর ১৩ আষাঢ় সাহিত্যসম্রাটের জন্মজয়ন্তী এবং ২৬ চৈত্র তাঁর প্রয়াণদিবস পালিত হয়। ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর জন্মজয়ন্তী। এছাড়া প্রতিমাসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ‘বঙ্কিমচর্চা-প্রবাহ’ নামে একটি করে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

সম্প্রতি বঙ্কিম-ভবনের গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত কয়েক হাজার মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকা এবং সাময়িকপত্রগুলিকে একত্রিত করে একটি পৃথক কর্নার তৈরি হয়েছে। যার উদ্বোধন করেন নৈহাটির বিধায়ক তথা বঙ্কিম-ভবনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক পার্থ ভৌমিক। ভবনের অধ্যক্ষ ড. (অধ্যাপক) রতনকুমার নন্দী জানান, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ, এশিয়াটিক সোসাইটি কিংবা উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার বাদে দুষ্প্রাপ্য পত্র-পত্রিকার এরকম সংগ্রহ খুব কম লাইব্রেরিতেই আছে। এগুলি এতদিন ভবনের বিভিন্ন ঘরে বিভিন্ন সংগ্রহে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এক জায়গায় পরপর সাজানোর ফলে পাঠকরা সহজেই তা ব্যবহার করতে পারবেন। ফলে কলকাতায় না গিয়েও এ অঞ্চলের গবেষকেরা বঙ্কিম-ভবনে বসেই তাঁদের গবেষণার কাজটি করতে পারবেন। এই সংগ্রহে একদিকে যেমন রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্র, সঞ্জীবচন্দ্র, শ্রীশচন্দ্র মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ, শৈলেশ মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদার প্রমুখ ব্যক্তিদের সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা, রয়েছে সেযুগের ‘প্রচার’, ‘ভ্রমর’, ‘নবজীবন’, ‘নব্যভারত’ কিংবা ‘তত্ত্ববোধিনী’র মতো পত্রিকা, তেমনই রয়েছে বিংশ শতকের ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘মডার্ন রিভিয়্যু’। রয়েছে  সমরেশ বসু সম্পাদিত ‘মহানগর’ পত্রিকার পুরো সেট। এছাড়া ‘বিশ্বভারতী পত্রিকা’, ‘মাসিক বসুমতী’, ‘সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা’, ‘পরিচয়’, ‘এক্ষণ’, ‘উত্তরসূরী’ থেকে ‘অনুষ্টুপ’, ‘কোরক’-সহ অজস্র গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা। এই পত্রপত্রিকার পৃথক বিভাগ নিঃসন্দেহে পাঠক তথা গবেষকদের কাছে বঙ্কিম-ভবন গবেষণা কেন্দ্রের বাড়তি আকর্ষণ এবং অবশ্যই নৈহাটিবাসীর কাছে এক গর্বের জায়গা। 

পরিশেষে বলা যায়, গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষলগ্নেও ভাঙাচোরা ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়েছিল সাহিত্যসম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কাঁঠালপাড়ার জন্মভিটে। কিন্তু আজ তার শরীরে নতুন রূপ। বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে রাজ্য সরকারের অর্থানুকূল্যে সংস্কারের পর সাহিত্য সম্রাটের জন্মস্থান আবার ফিরে এসেছে স্বমহিমায়।

Developed by