এইকাল নিউজ:
ফরাসিতে ভিনিগার শব্দের অর্থ ‘সাওয়ার ওয়াইন’। সাধারণত ভিনিগার বলতে টক ওয়ানইকেই বোঝায়। বিভিন্ন ঘরগৃহস্থালীর কাজে যেমন এই আপেল সিডার ভিনিগার উপকারী, তেমনই শরীরের নানা অসুখবিসুখেও কাজে আসে এটি।

ওজন ঝরাতে ইদানীং অনেকে আপেল সিডার ভিনিগার-এর উপরেই ভরসা রাখেন। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় এই টনিক। রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এর জুড়ি মেলা ভার। সৌন্দর্য রক্ষায়ও কাজে লাগে এটি। কিন্তু ভিনিগার অম্ল হওয়ার কারণে তা দৈনিক খাদ্যতালিকায় যোগ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিয়ম পালন করা জরুরি।
দিনে ১৫ মিলিলিটার বা বড় চামচের এক চামচের বেশি আপেল সিডার খাবেন না, খেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে। এ ছাড়া যখনই এই ভিনিগার খাবেন, তা অবশ্যই জলের সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে এই পানীয়তে অন্য কিছু ভুলেও মেলাবেন না।
কখন খাওয়া ভাল?
বদহজমের সমস্যা থাকলে সকালে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার যেতে পারে। সকালে এই পানীয় খেলে গ্যাস অম্বলের সমস্যা দূর হবে। তবে সকালে খালি পেটে এটি খেলে এর গন্ধে অনেকের বমি বমি ভাব হয়। সে ক্ষেত্রে জলখাবারের পরে এই পানীয় খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবিটিসের সমস্যায় এই ভিনিগার উপকারী। মূলত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের কারণেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। খাওয়াদাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস জলে এক চামচ আপেল সিডার মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। গলা ব্যথা কিংবা টনসিলের সমস্যা থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে এক কাপ গরম জলে আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। অনিদ্রার সমস্যায় ভুগলে রাতের বেলা ভুলেও এটি খাবেন না।
ওজন ঝরার ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে এই পানীয় খেলে বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে। এই পানীয় বিপাক হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম ভাল হয়। শরীরের মেদ দ্রুত ঝরাতে এই উপায়ের উপর ভরসা রাখতে পারেন। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে আপেল সিডার ভিনিগার খুবই উপকারী।
আপেল সিডার ভিনেগারের ৩০টি অজানা ব্যবহার
১. রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার গ্রহণের পর আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ৩৪ শতাংশ ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নয়ন করে এবং রক্তে শর্করা পরিমাণ পর্যাপ্ত কমায়। তবে আপনি যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তাহলে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
২. পেট পরিপূর্ণ রাখে: ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ এটি খেলে ক্ষুধা কম লাগে। কিছু সংক্ষিপ্ত গবেষণায় বলা হয়েছে, আপেল সিডার ভিনেগার কম ক্যালোরি গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পেটের চর্বি কমায়।
৩. খাবার সংরক্ষণ: অন্যান্য ভিনেগারের মতো আপেল সিডার ভিনেগারও খাবার সংরক্ষণে চমৎকার কাজ করে। আচার তৈরি এবং খাবার সংরক্ষণে মানুষ হাজার বছর ধরে ভিনেগার ব্যবহার করে আসছে। খাবার অ্যাসিড বাড়াতে কাজ করে আপেল সিডার ভিনেগার। আর এটি খাবারের এনজাইম নিষ্ক্রিয় করে এবং ব্যাকটেরিয়ারে মেরে ফেলে। এর ফলে খাবার পচে না।
৪. দুর্গন্ধনাশক: আপেল সিডার ভিনেগার ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদানের কারণে সুপরিচিত। এই কারণে দাবি করা হয়ে থাকে, দুর্গন্ধ দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগার চমৎকার কাজ করে। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো গবেষণা নেই। আপনি চাইলে পানির সঙ্গে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে ডিওডরেন্ট স্প্রে তৈরি করে দেখতে পারেন। দুর্গন্ধ দূরকারী প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগারের বেশ সুনাম রয়েছে।
৫. সালাদ তৈরি: সহজ উপায়ে ঘরে সালাদ তৈরি করতে চাইলে আপেল সিডার ভিনেগার একটি ভালো উপাদান। এটি সালাদের স্বাদ বাড়াতেও সাহায্য করে।
৬. ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: আপেল সিডার ভিনেগার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়- বিভিন্ন গবেষণায় প্রায়শই এমন দাবি করা হয়ে থাকে।
পরীক্ষাগারের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ক্যানসারের কোষ হত্যায় ভিনেগার কাজ করে। কিছু পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বলা হয়েছে, খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার কাজ করে। তবে এসব গবেষণার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়নি।
৭. পরিষ্কারক: আপেল সিডার ভিনেগার প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এর কারণ হচ্ছে, এর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান। এক কাপ পানির সঙ্গে আধা কাপ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিয়ে আপনি সব ধরনের পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
৮. গলার স্বর ঠিক রাখতে: গলার স্বর ভেঙ্গে গেলে তা ঠিক করতে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। মনে করা হয়, এটি অ্যান্টি ব্যকটেরিয়া, যার দ্বারা গলায় সমস্যা তৈরি করা ব্যকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করা যায়। তবে এর পক্ষে কোনো শক্ত প্রমান নেই।
তবে আপনি যদি এটি ব্যবহার করতে চান তাহলে কুলকুচি করার আগে অবশ্যই পানি মিশিয়ে নিবেন। কারণ আপেল সিডার ভিনেগার এক ধরণের অ্যাসিড। তাই পানি না মেশালে গলা পুড়ে যেতে পারে।
৯. ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে: আপেল সিডার ভিনেগার ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে এবং ব্রণসহ চামড়ার যে কোনো সমস্যা দূর করে। এছাড়া বয়সের ছাপ কমিয়ে আনতে এটি অত্যন্ত কার্যকরি। এ কারণে অনেকেই ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে।
তিন ভাগের দুইভাগ পানি এবং একভাগ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে তুলা দিয়ে হালকা করে মুখে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু যদি কারো ত্বক বেশি সংবেদনশীল হয় তাহলে পানির পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।
১০. ঘরের কিটপতঙ্গ মারার ফাঁদ হিসেবে: আপেল সিডার ভিনেগার ঘরের কিট পতঙ্গ মারার ফাঁদ হিসেবে খুব সহজে ব্যবহার করা যায়। একটি কাপে আপেল সিডার ভিনেগার ঢালুন এবং তাতে কয়েক ফোটা বাসন পরিস্কার করার সাবান মিশিয়ে দিন। এরপর এটাতে পোকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবে।
১১. ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করতে: ডিম সিদ্ধ করার সময়ে পানিতে একটু আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে দিন। তাহলে ডিম খুব দ্রুত ভালোভাবে সিদ্ধ হবে।
কারণ, ডিমের সাদা প্রোটিনে ভিনেগারের অ্যাসিডের কারণে তেজস্ক্রিয়তা তৈরি করে এবং তা ভালোভাবে সিদ্ধ হতে সাহায্য করে। এছাড়া ডিম সাদা রাখতে এবং ভাজার সময় হালকা ভিনেগার ব্যবহার করলে তা আরো সুন্দর হয়।
১২. খাবার সুস্বাদু করতে: এছাড়া খাবার সুস্বাদু করতে রান্নার সময় আপেল ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। মাংসের স্টেককে আরো সুস্বাদু করতে এটি জনপ্রিয় উপাদান। এটি মাংসে চমৎকার মিষ্টি এবং টক স্বাদ তৈরি করে।
এছাড়া স্টেককে আরো সুস্বাদু গন্ধ দিতে আপেল ভিনেগারের সাথে ওয়াইন ভিনেগার, রসুন, সয়া সস, পেঁয়াজ এবং গোলমরিচ মেশানো যেতে পারে।
১৩. ফলমূল বিষমুক্ত করতে: কিনে আনা ফলমূলে কীটনাশক পদার্থ থাকতে পারে। এছাড়া ফরমালিনের মতো বিষাক্ত পদার্থও থাকতে পারে। এজন্য অনেকে এসব ফলমূল বা শাক-সবজি বিষমুক্ত করতে আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে ধৌত করে।
যদিও এটি ফলমূলকে পুরোপুরি বিষমুক্ত করতে পারে না তবে শুধু পানি দিয়ে ধৌত করার চেয়ে এটি অধিক কাজ দেয়। এছাড়া খাবারের বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া দূর করে আপেল সিডার ভিনেগার।
উদাহরণ স্বরূপ, ভিনেগার দিয়ে ধৌত করা খাবার থেকে ই কোলি এবং সালমোনেলার মত বিপদজনক ব্যাকটেরিয়া দূর হয়েছে।
১৪. দাঁত পরিষ্কার করতে: আপনি দাঁত পরিষ্কার করতেও আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এটি দাঁত এ জমে থাকা দাগ ও হলদে ভাব দূর করে সাথে মুখে জমে থাকা অনুজীব দূর করে থাকে। যদিও দাঁত পরিষ্কারের সেরা পদ্ধতির বিষয়ে দ্বীমত রয়েছে। মনে করা হয়, আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে অন্য সব দাঁত পরিষ্কারের উপাদান থেকে মুখের ভিতরে কম ক্ষতি হয়।
১৫. স্নানের সময়: যে কারণে মানুষ আপেল সিডার ভিনেগার মুখের ত্বকচর্চায় ব্যবহার করে ঠিক একই কারণে এটি স্নানের সময়ও ব্যবহার করা যায়। ত্বক মসৃন ও সমস্যামুক্ত রাখতে আপেল সিডার ভিনেগার অত্যন্ত কার্যকরি।
আপনি স্নানের জলের ভিতর ১/২ কাপ আপেল সিডার ভিনেগার ঢেলে দিন। এবং গোসল করুন। এতে আপনার শরীরের ত্বক অত্যন্ত ভালো থাকবে।
১৬. চুলের যত্নে: আপেল সিডার ভিনেগার চুলের যত্মেও ব্যবহার করা যায়। এটি দিয়ে চুল ধুলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুল লম্বা হয় ও উজ্জল দেখায়।
দুই ভাগের একভাগ জল এবং একভাগ ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে দিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। আর যদি আপনার মাথার ত্বক সংবেদনশীল হয় তালে ভিনেগারের মধ্যে বেশি করে পানি মিশিয়ে নিন। কারণ এটি অ্যাসিডযুক্ত।
১৭. খুশকি কমাতে: হালকা জল ও ভিনেগার মিশিয়ে তা দিয়ে মাথা মাসাজ করলে খুশকি কমার সম্ভাবণা রয়েছে। পরিষ্কার নয় যে এটি কিভাবে কাজ করে। তবে ডাক্তারি তত্ত্বের মতে, ভিনেগারের অ্যাসিড মাথার ত্বকে মালাসেজিয়া নামক ছত্রাক প্রতিরোধ করে। যে ছত্রাক খুশকি বিস্তারে সহায়তা করে।
১৮. সস হিসেবে: সস হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগার হতে পারে আপনার খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়ার অন্যতম উপাদান। টমেটো সসের সাথে অল্প করে ভিনেগার মেশালে এটি খাবারকে আরো স্বাদযুক্ত করে দেয়।
১৯. স্যুপের মধ্যে: স্যুপের মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার দেয়া যেতে পারে। এতে স্যুপের স্বাদ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যদি ঘরে তৈরি স্যুপের স্বাদ আরো বাড়িয়ে নিতে চান তাহলে রান্নার শেষের দিকে অল্প করে ভিনেগার মিশিয়ে দিন।
২০. আগাছা বিনাশ করার জন্য: আপেল সিডার ভিনেগার দিয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন আগাছা বিনাশ করার ঔষধ। এরপর এটি বাড়ির বাগানের আগাছার উপর স্প্রে করে দিলে সেগুলো মরে যাবে। এছাড়া এর মধ্যে সাবান ও লেবুর রস মেশালে তা আরো কার্যকরী হবে।
২১. ঘরে কেক ও ক্যান্ডি তৈরি করতে: ঘরে কেক ও ক্যান্ডি তৈরি করার সময় এর স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়িয়ে তুলতে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যহার করা যায়। এটি ঘরে তৈরি এসব জিনিসকে আলাদা স্বাদ প্রদান করে।
২২. ব্যতিক্রমী গরম পানীয় তৈরি করতে: একটি ব্যতিক্রমী গরম পানীয় তৈরি করতে ১২ আউন্স (৩৫৫ মিলি) গরম পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, দারুচিনি ১ চা চামচ, ১ চামচ মধু এবং ২ টেবিল চামচ লেবুর রস দিতে হবে। এর স্বাদ অসাধারণ।
২৩. মুখ পরিষ্কারের জন্য: আপেল ভিনেগারকে মুখ পরিষ্কার করার জন্য কার্যকরী উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের শ্বাসের গন্ধ দূর করে।
যদি আপনি এটা করতে চান তাহলে অবশ্যই তা জলের সাথে মিশিয়ে নিবেন। এক কাপ বা ২৪০ মিলি পানির সাথে এক টেবিল চামচ ভিনেগার নিতে পারেন। সরাসরি ভিনেগার মুখের ভিতর ব্যবহার করলে দাঁত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৪. দাঁত পরিষ্কারের ব্রাশ পরিষ্কার করতে: আমরা দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করি। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহারের পর ব্রাশের ভিতরে অপরিষ্কার হয়ে যায়। তখন এ ব্রাশ পরিষ্কারের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায়।
ঘরে বসে টুথব্রাশ ক্লিনার যেভাবে বানাবেন- ১২০ মিলি পানি, ২ টেবিল চামচ ভিনেগার এবং দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা ভালোভাবে মেশালেই এটি তৈরি হয়ে যাবে।
২৫. দাঁত সাদা করার জন্য: আপেল সিডার ভিনেগার হলো অ্যাসিডযুক্ত। তাই অনেকে দাঁতের দাগ দূর করতে এবং দাঁত আরো সাদা করতে আপেল ভিনেগার ব্যবহার করে থাকে। আপনি এটি করতে চাইলে, একটু তুলা ভিনেগারে ভিজিয়ে দাঁতের উপর হালকা করে লাগান।
তবে এ কাজটি করতে গেলে খুব সাবধানে করতে হবে। কারণ আপেল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিড দাঁতের গোড়ায় লাগলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২৬. ব্রণ দূর করতে: অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এর আন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রভাব প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে। যা মুখে ব্রণের বৃদ্ধি কমিয়ে আনে এবং ব্রণ দূরীকরণে সাহায্য করে। এর এসিড মুখের পি এইচ এর মাত্রা ঠিক রাখে এবং অন্যান্য দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
২৭. আঁচিল দুর করতে: আঁচিল দুর করতে কাজ করে আপেল সিডার ভিনেগার। প্রাকৃতিকভাবে আঁচিল দূর করতে ভিনেগারের অ্যাসিড খুব কার্যকরী।
তবে এ পদ্ধতিতে আঁচিল দূর করা খুব কষ্টদায়ক। তাই আঁচিল দূর করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করতে চাইলে খুব সাবধানে করতে হবে।
২৮. প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে: নিজেকে আকর্ষণীয় করতে তুলতে নানা রকম সুগন্ধী ব্যবহৃত হয়। তবে বাড়িতেই খুব ভালো প্রাকৃতিক সুগন্ধী বা ডিওডোরেন্ট তৈরি করা যায়। যার মূল উপাদানই হলো আপেল সিডার ভিনেগার।
২৯. বাসন পরিষ্কারক হিসেবে: বাসার থালা বাসন আরো ভালোভাবে পরিষ্কার এবং এর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী আপেল সিডার ভিনেগার। বাসন পরিষ্কার করা সাবানের সাথে একটু ভিনেগার মিশিয়ে নিলেই এমন উপকার পাওয়া যায়।
৩০. মশা মাছি থেকে পরিত্রাণ পেতে: দুইভাগের একভাগে জল এবং এক ভাগে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সারা ঘরে স্প্রে করলে মশা মাছি দূরে থাকবে। এবং পরিবেশ সুন্দর রাখবে।
সতর্কতা:
আপেল সাইডার ভিনেগারের রঙ হলুদ থেকে কমলা হতে পারে। আপেলের খোসার রঙের উপর ভিনেগারের রঙ নির্ভর করে। যদি আপেলের রঙ ফ্যাকাশে গোলাপী হয় তাহলে ভিনেগারের রঙ হলুদাভ হবে, যদি গাড় লাল আপেল থেকে তৈরি করা হয় তাহলে ভিনেগার হবে গাড় রঙের। ব্লিচড আপেল সাইডার ভিনেগার বিক্রি করে কিছু ব্র্যান্ড যা বর্ণহীন বা সাদা রঙের হয়।
আপেল সাইডার ভিনেগার কেনার পূর্বে এর লেবেলটি পড়ে নিন। লেবেলে এসিডিটির মাত্রা উল্লেখ করা থাকবে এবং সবচেয়ে ভালো কাজ করে ৫% এসিডিটির ভিনেগার। লেবেলে উল্লেখিত নির্দেশনা মেনে চলুন এবং সেইভাবে সংরক্ষণ করুন।
বেশি পরিমাণে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে দাঁত, ইসোফেগাস ও স্টমাক লাইনিং এর ক্ষতি হতে পারে। সেইসঙ্গে শরীরের পটাশিয়াম লেভেল কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, বদহজম এবং হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তবেই গ্রহণ করুন আপেল সিডার ভিনেগার।
অনেকে সকালে উঠেই খালি পেটে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খান ওজন কমানোর জন্য। কিন্তু তারপর দীর্ঘক্ষণ অভুক্ত থাকেন। এটি করলে চলবে না। ঠিক খাবার খাওয়ার ২০ মিনিট আগে খেতে হবে এটি। তাহলে হজমশক্তিও বাড়বে এবং শরীরও ভালো থাকবে।
কখনোই অ্যাপেল সিডার ভিনেগার জল ছাড়া খাবেন না। হালকা গরম জলে মিশিয়ে খান। সেইসঙ্গে মেশাতে পারেন দারুচিনির গুঁড়ো ও লেবুর রস।
অনেকেই ভাবেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বেশি খেলেই ওজম দ্রুত কমবে। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। দিনে একবার ২৫০ মিলি জলে ১-২ টেবিল চামচ এটি মিশিয়ে নিন খান। একটানা দু’মাস খেলে ১৫ দিন বন্ধ রাখুন।
বাজারে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের আপেল সিডার ভিনেগার কিনতে পাওয়া যায়। কোয়ালিটি বা মানভেদে এদের দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ভাল মানের হলে ১ লিটার এর দাম ১০০০ বা ১৫০০ টাকা হয়ে থাকে আবার ৫০০মিলি এর দাম ৪৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এর মধ্যে হয়ে থাকে ।