Breaking
11 Apr 2025, Fri

ডিএ দেওয়ার প্রস্তুতি? ১৬ জুলাই বৈঠকে অর্থ দপ্তর

এইকাল নিউজ:

রাজ্য সরকারের সবক’টি দপ্তরের আর্থিক উপদেষ্টাকে বৈঠকে ডেকেছে অর্থদপ্তর। আগামী ১৬ জুলাই, শনিবার এই বৈঠক হওয়ার কথা। সবক’টি দপ্তরের আর্থিক উপদেষ্টাকে নিয়ে এরকম বৈঠক সচরাচর হয় না। তাই বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কৌতূহল ও জল্পনা তৈরি হয়েছে কর্মিমহলে। অনেকে মনে করছেন, সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) বিষয়টি বৈঠকে আলোচিত হবে।

অর্থদপ্তর থেকে যে চিঠি গিয়েছে, তাতে অবশ্য আলোচ্যসূচির তালিকায় সরাসরি ডিএ’র উল্লেখ নেই।

কিন্তু ৬ নম্বর সূচিতে ‘মিসলেনিয়াস’ অর্থাত্‍ ‘বিবিধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই ডিএ নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকছেই বলে মনে করছেন অনেকে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে সব দপ্তরের আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে নিতে চাইছে নবান্ন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আয়-ব্যয় সহ সার্বিক পরিস্থিতি বিস্তারিত বুঝে নিতে চাইছে তারা। এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় সরকারের উপর চাপ বেড়েছে। বকেয়া ডিএ দিতে গেলে কী ধরনের আর্থিক ধাক্কা আসবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।

জানা গিয়েছে, কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের হাতে খুব বেশি সময়ও ঩নেই। ২০ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের (সিপিআই) ভিত্তিতে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার রায় দেয়। রায় কার্যকর করার জন্য হাইকোর্ট তিন মাস সময় দিয়েছে সরকারকে। অর্থাত্‍, সরকারের হাতে আর প্রায় ৪০ দিন সময় আছে। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে বা হাইকোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে- এমনটা এখনও জানা যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ডিএ নিয়ে সরকার আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে চাইলেও আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে বাস্তব অবস্থা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।

ডিএ নিয়ে কোনও বিকল্প প্রস্তাব আদালতে পেশ করতে চাইলেও এর দরকার আছে। পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে সিপিআই’র ভিত্তিতে বকেয়া ডিএ মেটাতে সরকারের একসঙ্গে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হবে। ওই টাকা কিস্তিতে দিলে সরকারের সুবিধা। বর্ধিত হারে এখনকার ডিএ দিতে গেলে সরকারের খরচ আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। এই পরিস্থিতিতে কোন কোন খাতে খরচ কমানোর সুযোগ আছে, তাও পর্যালোচনা হতে পারে বৈঠকে।

শনিবার বেলা ১১ টায় সল্টলেকে নগরোন্নয়ন দপ্তরে ‘শুভান্ন’ ভবনের কনফারেন্স হলে এই বৈঠক হবে। অর্থদপ্তরের চিঠিতে জানানো হয়েছে, বাজেট সংক্রান্ত বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিম ও তার পরিচালনা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প, টেন্ডার ও আর্থিক পরিচালন ব্যবস্থা এবং অনলাইনে সরকারি কেনাকাটা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে ডিএ নিয়ে সেখানে কী আলোচনা হয়, সেদিকেই নজর রয়েছে সরকারি কর্মীদের।

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। হাইকোর্টের নির্ধারিত সময়সীমার অর্ধেক অতিক্রান্ত হয়েছে। তবে কি এবার বকেয়া ৩১% DA দেবে রাজ্য? বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স বা ডিএ) কবে পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা?

কলকাতা হাইকোর্টের বেঁধে যাওয়ার সময়সীমার অর্ধেক দিন কেটে গেলেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ৩১ শতাংশ ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স (ডিএ) প্রদান নিয়ে নবান্নের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে ধন্দে আছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।

গত ২০ মে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ৩১ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। অর্থাত্‍ ৪৫ দিন ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মেটাতে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা লাগবে।

কিন্তু আপাতত ডিএ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি রাজ্য সরকার। ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে কোনও পিটিশন দাখিলের খবর মেলেনি।

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের দাবি, ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত নিয়ম মোতাবেক ডিএ পাননি রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। সেই বকেয়া ডিএ যাতে রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেয়, সেই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের হিসাব অনুযায়ী, গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীরা (বেতনক্রম ৬,৬০০ টাকা হলে) বকেয়া ডিএ বাবদ ২৭৮,০০০ টাকা পাবেন। গ্রুপ ‘সি’ কর্মীরা (বেতনক্রম ৮,৮০০ টাকা) ৩৭৩,০০০ টাকা পেতে পারেন। আপার ডিভিশন অ্যাসিসট্যান্টের ক্ষেত্রে বকেয়া ডিএয়ের অঙ্কটা প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের হিসাব অনুযায়ী, বকেয়া ডিএ বাবদ তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৪৬৬,০০০ টাকা ঢুকতে পারে।

ডিএ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে বড় জয় পেয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীরা। আদালত রায় দিয়েছে অবিলম্বে বকেয়া সহ ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। যদিও রাজ্যের তরফ থেকে তেমন কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৩৪ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন। অন্যদিকে এই রাজ্যের সরকারি কর্মীরা মাত্র ৩ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে চাপানউতোর।
এখন তাই সবার নজর ১৬ জুলাইয়ের বৈঠকের দিকে।

Developed by