এইকাল নিউজ:

রাত পোহালেই রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল। একই সঙ্গে রাজভবনে হবে নতুন মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ। সেই আবহে পরিবহণ দফতরকে বুধবার সকালে রাজভবন আটটি বিশেষ গাড়ি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আট জন বিধায়ক বুধবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন?
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা জানিয়েছিলেন। জানা গিয়েছিল, চার-পাঁচ জন বাদ যাবেন, চার-পাঁচ জন নতুন আসবেন। তার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়, কারা বাদ যাবেন, কাদেরই বা নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে! সরকারি ভাবে এখনও কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। তবে রাজভবনের গাড়ি চাওয়ার হিসাব ধরেই মনে করা হচ্ছে নতুন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন আট জন। কারণ, রীতি অনুযায়ী নতুন মন্ত্রীদের শপথের দিন তাঁদের আনতে বাড়িতে গাড়ি যায় রাজভবনের তরফ থেকে। নবান্ন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালেই নতুন মন্ত্রীদের নামের তালিকা রাজভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করাতে সোমবার রাতেই ইম্ফল থেকে কলকাতায় এসে গিয়েছেন রাজ্যপাল লা গণেশন।

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, রাজভবন থেকে বুধবার সকালের জন্য আটটি গাড়ি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকেই তাই তত্পরতা শুরু হয়ে গিয়েছে পরিবহণ দফতরে। তবে আটটি গাড়ি চাওয়া মানেই নতুন মন্ত্রীর সংখ্যাও যে আট, এমনটা মানতে নারাজ দফতরের এক আধিকারিক। তিনি বলেন, ”এটা ঠিক যে, শপথ গ্রহণের আগে হবু মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ করতে হলে পরিবহণ দফতরকেই নির্দেশ দেয় রাজভবন। এই অতিরিক্ত গাড়িকে প্রশাসনিক ভাষায় বলা হয় ‘বাফার’। তবে অতিরিক্ত গাড়ি চাওয়া মানেই সমসংখ্যক মন্ত্রী শপথ নেবেন, তেমন ভাবনা ঠিক নয়।” পূর্ব অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ”এর আগেও শপথগ্রহণের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। প্রয়োজনের থেকে এক বা দু’টি গাড়ি বেশি চাওয়া হয়েছিল।”
সূত্রের খবর, সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে তৃণমূলের তমলুক জেলা সভাপতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁকে হয়তো এবার দলীয় কাজে লাগাতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অপরদিকে, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে পদ খোয়াতে হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুর এবং উত্তর শহরতলি এলাকার দুই মন্ত্রী পদ খোয়াতে পারেন বলে জল্পনা চলছে। এখন সবকিছু জল্পনা কল্পনার মাধ্যমে নাম উঠে আসছে। আগামীকাল বিকেলে সমস্ত রহস্যের উন্মোচন ঘটাবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, বাবুল সুপ্রিয়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পার্থ ভৌমিক, উদয়ন গুহ ও তাপস রায় মন্ত্রিসভায় আসতে চলেছেন। জানা গিয়েছে, সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন প্রদীপ মজুমদার। পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক হলেন প্রদীপ মজুমদার। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা তিনি।
মঙ্গলবার নবান্ন ও রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবুল সুপ্রিয়, উদয়ন গুহ, পার্থ ভৌমিক, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, তাপস রায় ও প্রদীপ মজুমদার পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে পারেন।
ঝাড়গ্রামের বিধায়ক বীরাবাহা হাঁসদা বর্তমানে রাজ্যে বন প্রতিমন্ত্রী। তাঁর মর্যাদা বাড়িয়ে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে।
এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিসাবে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে তাজমুল হোসেন ও সত্যজিত্ বর্মনকে। তাজমুল হোসেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক। তাজমুলকে মন্ত্রিসভায় আনলে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের বিধায়ক গুলাম রব্বানিকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হতে পারে। পরিবর্তে প্রতিমন্ত্রী করা হতে পারে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিত্ বর্মনকে।
তবে রাজনীতিতে শেষ মুহূর্তে অনেক কিছুরই বদল ঘটে যায়। ফলে বুধবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান না হওয়া পর্যন্ত কোনও তালিকাকেই চূড়ান্ত বলা যাবে না।
উল্লেখ্য, রাজ্য মন্ত্রিসভায় তিন মন্ত্রীর জায়গা এমনতেই ফাঁকা রয়েছে। প্রয়াত সাধন পাণ্ডে ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শূন্যস্থানে এখনও কাউকে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী। গত বছরের ৪ নভেম্বর প্রয়াত হন সুব্রত আর চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মারা যান সাধন। সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দফটারগুলিও ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। তবে এর বাইরেও আরও কিছু বদল হবে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার কয়েক জনকে দলের কাজে লাগানো হবে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেও মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আনতে হবে। এখন দেখার, বুধবার বিকেলে মন্ত্রিসভার কত জন নতুন সদস্য শপথ নেন!