Breaking
11 Apr 2025, Fri

পুজোয় ‘ভালবাসার সুরে ঠিকানা’র হদিস দেবে জান কুমার শানু, সুরের প্রাণ প্রতিষ্ঠায় অরূপ প্রণয়ম

এইকাল নিউজ:

গান তাঁর রক্তে। তাঁর ধমনী, অস্থিমজ্জায় প্রতিনিয়ত প্রবাহিত হচ্ছে সুরেলা তরঙ্গ। তিনি ‘মেলোডি কিং’ কুমার শানুর সুযোগ্য পুত্র। ঠিকই ধরেছেন জান কুমার শানুর কথাই বলছি। এবার পুজায় জান হাজির শ্রোতাদের ‘ভালোবাসার সুরে ঠিকানা’-র হদিশ দিতে।

Advertisement

নয়ের দশকে পুজোয় শ্রোতাদের মুগ্ধ করত তাঁর বাবার কালজয়ী গানের অ্যালবাম ‘সুরের রজনীগন্ধা’,’প্রিয়তমা মনে রেখো’ ‘সোনার মেয়ে’। সেই সব গান এখন‌ও রয়ে গিয়েছে সংগীত প্রেমীদের মনের মণিকোঠায়। সেই কালজয়ী গানগুলির নেপথ্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন সুরকার অরূপ-প্রণয়। জান কুমার শানুর এবারের পুজোর সিঙ্গেলসটির কম্পোজিশনের দায়িত্ব রয়েছেন সেই সুরকার জুটির অন্যতম অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি এখন পরিচিত অরূপ প্রণয়ম হিসেবে। বাবার সেই মেলোডির ধারাকেই বহমানতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলার কাজটিই করছেন জান কুমার শানু। তাঁর নামের সঙ্গেই ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাবার নামটি। গানের কথাতেও সেই ছোঁয়াই সুস্পষ্ট। ‘দূরে আছি তবু দূরে নয় তো/ কথা-সুরে আছে পরিচয় তো।’ গানটির গীতিকার প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। দেবীপক্ষের দ্বিতীয়ায় বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-তে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হলো জান কুমার শানুর গাওয়া এই সিঙ্গেলসটির। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা তোচন ঘোষ। ছিলেন গায়ক জান কুমার শানু সহ গানের সুরকার অরূপ প্রণয়ম, জানের মা রীতা ভট্টাচার্য (তিনি এই সিঙ্গেলসটির অন্যতম প্রযোজক‌ও), মডেল-অভিনেত্রী নয়নিকা(যিনি এই মিউজিক ভিডিওটিতে অভিনয় করেছেন) এবং বহু বিশিষ্ট মানুষজন। প্রসঙ্গত, এটি জানের গাওয়া তৃতীয় পুজোর অ্যালবাম। মাত্র আট বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম পুজোর গান ‘তোমরা শুনবে তো।’ সেই অ্যালবামের গানগুলি লিখেছিলেন প্রিয় চট্টোপাধ্যায়। ২০২০-তে জি মিউজিক বাংলা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় পুজোর গান ‘মা যে এসে গেল।’ এবার এক বছর পর নিজের তৃতীয় পুজোর গান নিয়ে আসছেন জান। এবারে জানের গাওয়া এই গানটিও প্রকাশ পাচ্ছে জি মিউজিক বাংলা থেকেই। পুজোর এই সিঙ্গেলসটি নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত জান। তাঁর কথাতেও সেই ছোঁয়ার আভাস ধরা পড়েছে। জানের কথায়, “এই গানটা আলাদা।কারণ এই গানের নেপথ্যে যে টিমটা রয়েছে, সেটা লেজেন্ডারি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। কারণ আমি অরূপ প্রণয়ম আঙ্কেল ও প্রিয় চট্টোপাধ্যায় দাদার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যাঁরা আমার বাবার সঙ্গে এমন সমস্ত গান তৈরি করেছেন যেগুলো ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই সিঙ্গেলসটির মধ্যে দিয়ে সেই ম্যাজিকটাই আর‌ও একবার তৈরি হয়েছে।” পাশাপাশি জান এটাও জানাতে ভোলেননি যে তাঁর বাবার গাওয়া পুজোর গানের মাধ্যমেই পুজোর ছোঁয়ার আভাস পান তিনি। এ প্রসঙ্গে বাবার গাওয়া ‘প্রিয়তমা মনে রেখো’ গানটিই যে তাঁকে পুজোর অনুভূতির ছোঁয়া দেয় সেটা জানাতেও ভুললেন না। তবে এদিনের অনুষ্ঠানে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া জান জানান, “বাবাকে খুব মিস করছি। বাবা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে আমি নিজেকে সম্পূর্ণ বলে মনে করতাম। বাবা মুম্বাইয়ে দুর্গাপুজো নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমি জানি বাবার আশীর্বাদ আমার উপর রয়েছে।” নিজের এই পুজোর গানটি বাবাকে সামনাসামনি বসিয়ে শুনিয়ে সারপ্রাইজ দিতে চান জান। এক‌ইসঙ্গে সামনাসামনি বসে গান শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষায় মুখিয়ে রয়েছেন জান। তবে এই পুজোর গান নিয়ে তাঁর মা রীতা ভট্টাচার্য-র বক্তব্য স্পষ্ট “জানের গান ভালো লাগলেও সেটা জানাবেন আর খারাপ লাগলে সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করবেন না।” তবে বাবা কুমার শানুর মতোই নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমেই সংগীতের দুনিয়ায় সাফল্য পেতে চান জান সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তাঁর মতে, “আমার বাবা সেলফ মেড একজন শিল্পী। বাবার মাথায় কার‌ও হাত ছিল না। তবে বাবার এই উত্তরণের মায়ের‌ও অনেক অবদান রয়েছে।বাবা চান আমিও যেন নিজের পরিশ্রমের গানের কেরিয়ার তৈরি করি।” তবে গায়কির বিষয়ে এখন‌ও যে বাবার থেকে পরামর্শ নেন সে কথা জানিয়েছেন জান। জানের এই সিঙ্গেলসটি নিয়ে রীতিমতো আশাবাদী সুরকার অরূপ প্রণয়ম। তাঁর কথায়, ” এবারে পুজোয় আমার গানেতে আমি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করব জানকে দিয়ে। আমি বরাবরই মেলোডির সমর্থক। মেলোডি ছাড়া আমি কিছুই জানি না। মেলোডির ধারায় ভাসতে ভাসতেই আমি জানকে পেয়েছি। বৌদি( রীতা ভট্টাচার্য) আমাকে ওর গান শুনিয়েছিল। জানের গলায় সেই মাধুর্যকে খুঁজে পেয়ে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছি। এই প্রজন্মকে বার্তা দেওয়ার মতো একজন শিল্পীকে পেয়েছি। অল্প বয়স থেকেই ও তালিম নিয়েছে। সংগীতের এমন কোন বিষয় নেই যেটা ওর জানা নেই। ও একজন পরিপূর্ণ সংগীতশিল্পী।” তাঁর সুরে জানের এই গানটিও যে ইতিহাস গড়তে চলছে তা নিয়ে যথেষ্টই বিশ্বাসী তিনি।” পাশাপাশি অরূপ প্রণয়ম এটাও বলেন, ” কুমার শানুর গানের উত্তরাধিকারকে জান যে আর‌ও অনেক উচ্চতায় নিয়ে যাবে তাতে কোন‌ও সন্দেহ নেই। ওর গানের গলা ওর বাবার থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি ওর বাবাকে ‘লায়ন’ বলতাম। ওর যথাযোগ্য ভাবেই ‘শের কা বাচ্চা।’ গানটা রক্তে রয়েছে। কন্ঠীগায়ক নয়, ওর মধ্যে যে স্পার্ক রয়েছে, যে তালিম রয়েছে তার জন্য‌ই ও অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়ে যাবে।” তোচন ঘোষের কথায়, “আমি এই গানটার সঙ্গে শুরু থেকেই যুক্ত রয়েছি। আমার অফিসে বসেই প্রিয় চট্টোপাধ্যায় এই গানটা লিখেছে। অরূপ সুর করেছে। গানটার রেকর্ডিংয়েও আমি ছিলাম। আমি ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ বলে একটা ছবির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। সেই ছবিতে চিরঞ্জিতের লিপে জানকে দিয়ে দুটো গান আমি করিয়েছি। একটি রবীন্দ্রসংগীত, আরেকটি মান্না দে-র কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র একটি গান। আগামী দিনে আর‌ও কয়েকটা বাংলা ছবিতে জানকে দিয়ে গান গাওয়ানোর ইচ্ছে রয়েছে। আমি যতদিন অনুষ্ঠানের সংগঠক থাকব, জানকে বড় শিল্পী হ‌ওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাব।” তবে কুমার শানুর ছেলে হ‌ওয়ায় তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশার চাপের পাশাপাশি বাবার সঙ্গে তুলনাও টানা হবে সেটা ভালো করেই জানেন জান। তাইতো তাঁর কথায় “আমাকে এত অল্প বয়সে বাবার মতো একজন লেজেন্ডারি শিল্পীর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে সেটা পজেটিভ‌ ভাবেই নিই। আমার গলা বাবার থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি বাবার মতো গাইতেও চাই না। গানের দুনিয়ায় একজন কুমার শানু‌ই যথেষ্ট। লোকজন একবার আমার গান শুনে নিলেই বলে শানুদার মতো নয় কিন্তু খুব ভালো আওয়াজ।” পাশাপাশি খুব তাড়াতাড়ি বাবার সঙ্গে গান করতে চলেছেন জান, জানালেন সে কথাও। পাশাপাশি বাবার নাম নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করা নিয়ে জানের জবাব, “বাবার পদবী তো আমিই বহন করে নিয়ে যাব।” তবে এদিন বাবার সঙ্গে বিতর্কের বিষয়টি নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেন জান। তাঁর কথায়, “সব পরিবারেই কিছু না কিছু সমস্যা হয়। তবে দিনের শেষে উনি আমার বাবা। আমি ওনার ছেলে। সন্তান ভুল করলে সব বাবা-মা ক্ষমা করে দেন। আমার বাবাও তাই।” তবে ২৮বছরে প্রথমবার কলকাতায় দু্র্গাপুজোয় থাকছেন জান। মঞ্চে পারফর্ম করার পাশাপাশি উত্তেজিত জান জানালেন ফিসফ্রাই, চপ, কাটলেটের স্বাদ‌ও নেবেন।আর পরিবারের সঙ্গে প্যান্ডেলে ঠাকুর‌ও দেখবেন। তবে আগামী দিনে জান কতখানি নিজের বাবার গানের উত্তরাধিকারকে বয়ে নিয়ে চলেন সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

Developed by