Breaking
11 Apr 2025, Fri

প্রসঙ্গ মুকুল :  লিখছেন জীবন্ত কিংবদন্তি সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়

মুকুলকে দেখে সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। তার চেয়েও খারাপ লাগছে ওর পুত্রের উন্মত্ত, অপরিণামদর্শী আচরণ আর একজন দৃশ্যতই অসুস্থ, অপ্রকৃতিস্থ, অসংলগ্ন কথা বলা বয়স্ক মানুষকে নিয়ে বঙ্গ-মিডিয়ার সুপরিকল্পিত ধ্যাষ্টামো।

Advertisement

আমার খারাপ লাগছে কেননা ওকে আমি আমার পেশা-জীবনের গোড়া থেকে চিনি। আমি তখন আজকালে, অফিস ছিল সিটি কলেজ সংলগ্ন লাহাবাড়িতে। তখন আমহার্স্ট স্ট্রিটের সবচেয়ে পরিচিত দাদা ছিলেন ‘ছোড়দা’ ওরফে সোমেন মিত্র, তাঁর বাড়ির একতলায় সর্বদা কংগ্রেসি ছেলে-ছোকরাদের ভিড় লেগে থাকত, অফিস যাতায়াতের পথে আমিও কচ্চিৎ কদাচিৎ সেখানে ঢুঁ মারতাম। তখন মুকুল সেখানে ডিউটি দিত, অতিথি-অভ্যাগত এলে তাদের চা-পান করানোর দায়িত্ব ছিল মুকুলের।

ছোড়দার একজন মামুলি চিয়ার লিডার থেকে শিক্ষাগত বা বংশগত তেমন কোনও পুঁজি ছাড়াই ধাপে ধাপে মুকুল রাজনীতিতে যে উচ্চতায় উঠেছিল তা সত্যিই বিস্ময়কর। কংগ্রেসে সোমেন মিত্র, সিপিএমে অনিল বিশ্বাসের যে ভূমিকা, তৃণমূল কংগ্রেসে মুকুল রায়েরও তাই। এই কংগ্রেস-ছুট আঞ্চলিক দলটির ম্যাসকট যদি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নেপথ-নায়কের স্বীকৃতিটি তাহলে মুকুলেরই প্রাপ্য। একইসঙ্গে একথাও ঠিক মুকুলের যা প্রাপ্য ছিল, কিছুটা বরাত, বেশিটা দিদির সৌজন্যে সে তার অনেক বেশি পেয়ে গিয়েছে। দিল্লির রেলভবনে মন্ত্রীর পিছনের দেওয়ালে স্বাধীনতা-উত্তর যতজন দেশের রেলমন্ত্রী হয়েছেন তাঁদের সবার নাম লেখা একটি ঝকঝকে বোর্ড আছে। সেখানে লালবাহাদুর শাস্ত্রী, জগজীবন রাম, গুলজারিলাল নন্দ, কমলাপতি ত্রিপাঠি, গনিখান চৌধুরী, জর্জ ফার্নান্ডেজ এবং অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মহাহস্তীদের সঙ্গে তার নামটিও চিরকালের মতো থেকে যাবে, মুকুল রায় নিজেওকি সেকথা ভাবতে পেরেছিল?

রাজনৈতিক জীবনে মুকুলের আর নতুন কিছু পাওয়ার আছে বলে মনে হয়না, শরীরের যে বেহাল দশা তা দেখে মনে হয় দেওয়ারও বিশেষ কিছুই নেই। নিজের এমন অতর্কিত প্রান্তিক অবস্থান সম্পর্কে বেচারা খুব সম্ভবত ওয়াকিবহালও নয়, পার্কিনসনস আর ডিমেনশিয়া এমনই অনপনেয় রোগ। ওর এখন কেবল একটিই জিনিসের প্রয়োজন। স্বজন-বন্ধুর স্নেহের ছায়ায় অফুরন্ত বিশ্রাম। মর্মান্তিক সত্যটা হোল বি জে পি হোক বা তৃণমূল, কোনও দলের কাছেই মুকুল রায়ের আর কোনও প্রয়োজন অবশিষ্ট নেই।

বোঝাই যাচ্ছে হিতাহিতজ্ঞান খোয়ানো একজন মানুষকে কোনওভাবে ফুসলে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই বলে বাড়িতে কিলো কিলো রিপোর্টার ডেকে কোনও আত্মজ এইভাবে অসুস্থ বাবাকে বেইজ্জত করতে পারে? কিংবা যে মানুষটি দৃশ্যতই অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে, তার মুখের সামনে ডান্ডা ধরে সেই মর্মান্তিক দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দী করে ঢাকঢোল পিটিয়ে তা প্রচার করতে হবে? বাংলার মিডিয়াকে নিয়ে অনেককাল হোল লোকে টিটকিরি মারে। অচিরে থুতু দেবে, সেটাই প্রাপ্য ওদের।

Developed by